মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ১০ টি উপায়
মুখের দূর্গন্ধ নিয়ে ভোগান্তি! দূর্গন্ধের জন্য কথা বলার ভয়! আজকের আর্টিকেল আপনাকে এই সমস্যা থেকে বের হতে সাহায্য করবে সাথেই থাকুন।
মূখের দূর্গন্ধ কিভাবে কমাবো তা জানার আগে আসুন জেনে আসি ঠিক কি কি কারণে আমাদের মুখে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
মানুষের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টির পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। মুখের ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ভেঙে দেয় যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। কিছু খাবার যেমন পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার পর মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। দাঁতের ফাঁকে খাদ্য জমা হলে তা পচে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার না রাখলে ব্যাকটেরিয়া জমা হয় এবং সেখান থেকে দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, হেপাটিক বা কিডনি সমস্যাও মুখে দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
তবে আজকে কিছু উপায় বলবো যা আপনার মুখের দুর্গন্ধ রোধে কাজে আসবে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু কার্যকর উপায়:
- দৈনিক দাঁত ব্রাশ করা: দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সকালে ও রাতে ব্রাশ করলে মুখে তাজা গন্ধ বজায় থাকে, যা সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার: মাউথওয়াশ মুখের pH লেভেল সমান্য করে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং দূরগন্ধ কমায়।
- জিভ পরিষ্কার করা: জিভে জমানো জীবাণু দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে, তাই জিভ পরিষ্কার রাখা জরুরি। জিভ ব্রাশ বা স্ক্র্যাপার না থাকলে, দাঁত ব্রাশ করতেও জিভ পরিষ্কার করা যায়।
- ফ্লসিং: খাবার পরে অনেকের দাঁতের ফাকে খাদ্য ফেঁসে থাকে। সে ক্ষেত্রে ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার করলে খাদ্যকণা জমে থাকেনা যা দুর্গন্ধ হতে মুক্ত রাখে।
- পানি পান করা: অধিক সময় ধরে মুখ বন্ধ করে রাখলে মুখে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তাই একটু পর পর পানি পান করুন। পানি পান করা মুখের ভিতরের শুকনোভাব কমায় এবং মুখের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- তাজা খাবার খাওয়া: পেঁয়াজ, রসুন বা অন্য যেসব খাবার থেকে মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে, সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। আপেল, গাজর, পেয়ারা ইত্যাদি ফল ও সবজি মুখ পরিষ্কার রাখে। মুখের দূর্গন্ধ এড়াতে এগুলো ফল খেতে পারেন।
- ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। তাই ধুমপান এড়িয়ে চলুন।
- দারুচিনি: যারা মুখের অতিরিক্ত দূর্গন্ধ নিয়ে ভূগেন তারা একটুকরো দারুচিনি নিয়ে ছোট খন্ডে ভাগ করে মুখের মধ্যে পুরে রাখবেন। দারুচিনিতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের দুর্গন্ধ কমায় এবং ফ্রেস অনুভব করায়।
- গ্রিন টি পান করুন: গ্রিন টির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। তাই দিনে দুই-তিন বার গ্রিন টি পান করতে পারেন।
- মৌরি চর্বণ: মৌরি মুখের দূরগন্ধ কমাতে বেশ কার্যকরী। মৌরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, যা মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। মৌরির সুগন্ধ মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং তাজা সুবাস প্রদান করে। মৌরি হজমে সহায়ক, যা পেটের গন্ধ মুখে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
মুখে মাউথওয়াশ ব্যবহারে কিভাবে দূরগন্ধ দূর হয়?
মাউথওয়াশ মুখের দূরগন্ধ দূর করতে কার্যকরী হতে পারে নিম্নলিখিত কারণে:
বৈরী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস: মাউথওয়াশে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে যা দূরগন্ধ সৃষ্টি করে।
মুখ পরিষ্কার রাখা: মাউথওয়াশ মুখের ভেতরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যেখানে ব্রাশ বা ফ্লস পৌঁছাতে পারে না, ফলে মুখ আরও পরিষ্কার থাকে।
তাজা সুবাস প্রদান: মাউথওয়াশে থাকা সুগন্ধী উপাদানগুলি মুখের দুর্গন্ধ ঢেকে রেখে তাজা সুবাস প্রদান করে।
অম্লতা কমানো: কিছু মাউথওয়াশ মুখের pH লেভেল সমান্য করে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং দূরগন্ধ কমায়।
মাউথওয়াশ ব্যবহারের সময় নির্দেশিত সময় ধরে মুখে ঘুরিয়ে নিন এবং তারপর থুতু ফেলে দিন। তবে, মাউথওয়াশ ব্রাশ এবং ফ্লসের বিকল্প নয়, তাই প্রতিদিনের মাউথ কেয়ার রুটিন হিসেবে এগুলোও জরুরি।
জিভ কিভাবে পরিষ্কার রাখবো?
জিভ পরিষ্কার রাখার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- জিভ ব্রাশ বা স্ক্র্যাপার ব্যবহার করুন: বাজারে বিভিন্ন ধরনের জিভ ব্রাশ বা স্ক্র্যাপার পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে জিভে হালকা চাপ দিয়ে ব্রাশ করুন বা স্ক্র্যাপ করুন।
- সাধারণ ব্রাশ ব্যবহার করুন: জিভ ব্রাশ বা স্ক্র্যাপার না থাকলে, দাঁত ব্রাশ করতেও জিভ পরিষ্কার করা যায়। ব্রাশের ব্রিসলগুলি দিয়ে ধীরে ধীরে জিভে ব্রাশ করুন।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন: জিভ ব্রাশ করার পর মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে জিভের আরও গভীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও অম্ল পদার্থ দূর হয়।
- নিয়মিত পরিষ্কার করুন: প্রতিদিন সকালে এবং রাতে জিভ পরিষ্কার করার অভ্যাস করুন।
জিভ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি, জিভে থাকা ব্যাকটেরিয়া দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। নিয়মিত জিভ পরিষ্কার করলে এই ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং মুখের দুর্গন্ধ কমে। জিভের উপর জমা হওয়া ব্যাকটেরিয়া এবং টক্সিন শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। জিভ পরিষ্কার করলে এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্য
মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা খুব সাধারণ একটা সমস্যা, এবং এটি নিরাময়যোগ্য। অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়। নিয়মিত মুখ পরিষ্কার রাখলে, খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তন এর ফলে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে, অধিক সময় ধরে মুখ বন্ধ করে না থাকলে সমস্যাটি কমে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url