কলা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

 কলা খাওয়ার উপকারিতা 

কলা একটি সহজলভ্য ফল। সেইজন্য অনেকে কলা খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু জানেন কি? কলার এমন সব উপকারিতা রয়েছে যা আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। 

আপনি যদি কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এ আর্টিকেল টি আপনাদের জন্যই। আজকে আমরা কলার পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।

সূচিপত্র

কলা খাওয়ার পাঁচটি কার্যকারী উপকারিতা 

বাংলাদেশে কলা সারা বছরই পাওয়া যায়। এবং সকল শ্রেণির মানুষই এই ফলটি খেতে পায়। অনেকে আবার সহজলভ্য হওয়ায় খেতে চান না। কিন্তু শরীর ঠিক রাখতে হলে আপনার খাদ্যতালিকায় এই ফলটি রাখতে হবে। তাহলে আসুন জানা যাক কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। 

১.ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে: কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। একটি কলাতে প্রায় ৪০০-৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়াম সাহায্য করে আমাদের শরীরে রক্তচাপ অথবা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে  রাখতে। তাই দিনে ২ টি করে কলা খেতে পারেন। 

২.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কলা খেলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অনেক মানুষ রয়েছেন যারা খুব দ্রুতই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীরে যখন ইমিউনিটি সিস্টেম অনুন্নত হতে থাকে তখনই মানুষের রোগ বালাই হয়। এবং কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। এই জন্য রোজ ১-২ টা করে কলা খাওয়ার অভ্যাস করে তুলুন। কলাতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই। যা আপনাকে রোগ বালাই এর সাথে লড়াই করতে সাহায্য করবে। কলা খেলে আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত হতে থাকবে। 

৩.পেটের সমস্যা দূর করতে: কলাতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। একটি বড় সাইজের কলায় ৪-৫ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন একটি দুইটি করে পাকা কলা খাওয়া দরকার। 

কাঁচ কলা, আগের দিনের মানুষ দেখবেন পেটের সমস্যা বা পেটের অসুখে কাঁচকলার তরকারি খেত। কাঁচকলায় থাকা এনজাইম ডায়রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। তাই তাদের পেটের সমস্যা জনিত রোগ হলেই তারা কাঁচ কলার তরকারি খেত।

৪.হাড় মজবুত করতে: কলা অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। একটি কলায় রয়েছে ৭০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিয়মিত কলা খেলে হাড় মজবুত হয়। তাই প্রতিদিন ১-২ টি করে কলা খান। 

৫.ওজন নিয়ন্ত্রণে: মানুষের যখন ওজন বৃদ্ধি পায় তখন তার শরীরেও দেখা দেয় নানান ধরনের রোগবালাই। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করে থাকেন। আপনি আপনার ডায়েটে কলা রাখতে পারেন। কারণ কলা একটি ফাইবার যুক্ত ফল। আশঁ যুক্ত খাবার হওয়ার ফলে এটি হজম হতে সময় নেয়, খিদেও কম অনুভব হয়। ফলে বার বার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। আবার শরীর চর্চা করার পরে বা আগে কলা খেলে তা আপনার শরীর কে শক্তি দিবে। ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।

কলা খাওয়ার অপকারীতা 

প্রতিটি জিনিসেরই উপকারিতার পাশাপাশি অপকারীতাও থাকে তবে সেটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে তেমনি কলা খাওয়ার কিছু অপকারীতাও রয়েছে। যথা:

  • কলা খাওয়া ভালো কিন্তু যারা অতিরিক্ত কলা খান তারা সাবধান। অতিরিক্ত কলা খেলে তা আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে। দিনে ১-২ টার বেশি কলা খাওয়ার দরকারী নেই। 
  • মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে কলা না খেলেই উত্তম। হ্যাঁ খেলে অনেক সামান্য খেতে পারেন। কলাতে টাইরামাইন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যেইটা আপনার  মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
  • রাতে কলা খাবেন না। কলা খেলে প্রচুর ঘুম হয়। ফলে অতিরিক্ত সময় ধরে আপনি ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। 
  • যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় এই সমস্যা থাকলে কলা খাবেন না। কারণ কলা একটি ঠান্ডা ফল এটি খেলে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। 
  • কলাতে রয়েছে শর্করা এবং স্যুগার। বলা হয় একটি মাঝারি সাইজের কলায় ১৪-১৫ গ্রাম চিনি থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের কলা না খাওয়াই ভালো। তবে একটি অথবা অর্ধেক করে খেলে খেতে পারে। 
  • যারা ঘুম থেকে উঠেই ব্রেকফাস্ট হিসেবে কলা খান তারা এই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলুন। কারণ খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভূগতে পারেন। বিশেষজ্ঞ রা বলেন খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়।  তাই ব্রেকফাস্টে কলা খাওয়ার পূূর্বে কম ফাইবার যুক্ত সবজি খেতে পারেন। 

উপরের সমস্যা গুলো সবার ক্ষেত্রে নয়, কলার অপকারীতার থেকে উপকারই বেশি। তাই আপনার মধ্যে ওপরের সমস্যা গুলো দেখা দিলে আপনার কলা এড়িয়ে চলাই উত্তম। একেবারে যে বাদদিবেন তা নয় কিন্তু পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা 

আপনি কি জানেন সঠিকসময়ে সঠিক খাবার খেলে পাওয়ায় উপযুক্ত পুষ্টি গুণাগুণ। তেমনি সকালে কলা খাওয়ার কিছু উপকারীতা রয়েছে যেমন 

১. কলা একটি হাই ফাইবার জাতীয় ফল। এছাড়াও এটিতে থাকা কার্বহাইড্রেট আপনাকে পুরো দিন শক্তি যোগাবে। সকালে কলা খেলে আপনার পেট অনেক্ক্ষণ ধরে ভরা থাকবে। ক্লান্তি আসবে না। দূূর্বল অনূভব হবে না।  সারাদিন কাজ করতে পারবেন। 

২. যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য সকালে কলা খাওয়া অনেক কার্যকরী। কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সাহায্য করবে। 

৩. যাদের অফিসে বা প্রতিষ্ঠানে অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয় তারা সকালে ব্রেকফাস্টে কলা রাখতে পারেন। কারণ কলা মেন্টাল হেলথ কে স্ট্রং করে এবং স্ট্রেস মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে করে আপনার মন মেজাজ ভালো থাকবে 

 ৪.যারা রোজ ব্যায়াম করেন তাদের জন্য সকালে কলা খাওয়া অনেক ভালো। সকালে কলা খেয়ে ব্যায়াম করলে তা আপনাকে শক্তি যোগাবে, অনেক ক্ষন ধরে ব্যায়াম করতে পারবেন।

৫. যাদের ব্রেইন স্ট্রং না, পড়া মনে রাখতে পারেন না। তারা সকালের ব্রেকফাস্টে কলা রাখবেন। প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে কলা খেলে ব্রেইন স্ট্রং হতে সাহায্য করবে। ফলে পড়াশোনা মনে রাখতে পারবেন। 

তবে যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের জন্য সকালে কলা না খাওয়াই ভালো।

খালি পেটে কি কলা খাওয়া যাবে? 

কলা খাওয়া ভালো কিন্তু কিছু সময় রয়েছে যখন কলা খেলে উলটে হতে পারে বিপদ। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই সরাসরি কলা খান। কিন্তু বিশেষজ্ঞ রা বলেন সরাসরি খালিপেটে কলা খাওয়া ভালো নয়। কারণ সকালে এমনিতেই মানব শরীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে এর ওপর বেশি পাকা কলা খেলে রক্তে প্রচুর পরিমাণে শর্করা চলে যায়। যা স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে, এবং সারাদিনে ক্লান্তি ভাব বয়ে নিয়ে আসতে পারে। 

আবার যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের খালি পেটে কলা খাওয়া একদমই উচিৎ নয়। কারণ কলাতে উচ্চ ফাইবার রয়েছে যা হজম হতে সময় লাগে, এবং খালি পেটে কলা পড়ার পরে তা এসিডের তৈরি করে যার জন্য হয় গ্যাসের সমস্যা। 

যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আপনারা খালি পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কলাতে রয়েছে প্রায় ৪০০ মিলি গ্রা. পটাশিয়াম। 

অনেক সময় ধরে  না খেয়ে থাকার পর কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফলে খালি পেটে কলা খাওয়ার অভ্যাস ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। 

এজন্য একদম খালি পেটে কলা খাবেন না তবে পাউরুটি, বেরি, চিড়া,ম্যাপল সিরাপ,ডিম এগুলো খেয়ে তারপর কলা খেতে পারেন। অথবা ওটস এর সাথে খেজুর, কলা,দুধ, বাদাম মিশিয়ে একসঙ্গে খেতে পারেন।

ত্বকের যত্নে কলার ব্যাবহার। 

কলা খাওয়ার উপকারিতা যেমন শরীরের ক্ষেত্রে রয়েছে তেমনি রুপচর্চার ক্ষেত্রেও কলার অনেক গুণাগুণ রয়েছে। আপনি যদি ত্বকের যত্নে কলার গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। এখানে আমরা উল্লেখ করবো কলা দিয়ে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন। 

১.কলা, লেবু এবং টকদই: প্রথমেই একটি কলার আধা টুকরো নিন। নিয়ে ভালো করে পালিশ করে নিন যেন গুটি গুটি না থাকে। তারপর ১ টেবিল চামচ ফ্যাটানো টকদই এবং ৩-৪ ফোটা লেবুর রস দিয়ে সব উপকরণ গুলো ভালো করে ফিক্স করে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার মুখে এই মিশ্রণটি ৩০ মিনের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে। এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।

২.কলা এবং মধু: প্রথমে কলা ম্যাস করে নিতে হবে। তারপর কলার পেস্টের সাথে ১-২ চা চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে থাকুন না শুখিয়ে যাওয়া পর্যন্ত৷ শুখিয়ে যাওয়ার পর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক টা লাগানোর ফলে ত্বকের অতিরিক্ত অয়েলি ভাব দূর হয়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি মাসে ৩-৪ বার করতে পারেন।

৩.কলার খোসা: যারা ব্রণের সমস্যা ভোগেন। তারা কলা খেয়ে কলার খোসা ফেলবেন না। কলার খোসার যে সাদা অংশ টা রয়েছে সেটি আপনার ব্রণ দূর করতে যাহায্য করবে। মুখের যে স্থানে ব্রণ বের হয়েছে সেই স্থানে কলার খোসা লাগিয়ে বাদামী না হওয়া অব্দি ঘষতে হবে। এটি রাতে করতে পারেন। 

৪.কলার খোসা এবং মধু: রাত জাগা বা অনেক পড়াশোনা করার কারণে অনেকের চোখের নিচ দিয়ে কালি পরে যায়। এই কালি ভাব দূর করতে কলার খোসার ওপরে হাল্কা করে মধু লাগিয়ে চোখের নিচে সারারাত লাগিয়ে রাখুন। কয়েক দিন এভাবে কন্টিনিও করলে ভালো ফলাফল পাবেন। 

৫.কলা এবং কফির প্যাক: প্রথমেই একটি কলা চটকে নিতে হবে। এর সঙ্গে অল্প পরিমাণে কফি গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে  হবে। ভালো করে মেশানোর পরে মুখে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। আপনাদের যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা এই প্যাকটি বানিয়ে ব্যাবহার করে দেখতে পারেন। সপ্তাহে ১ বার এই প্যাকটি ব্যাবহারে ফলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে যাবে।

লেখকের মন্তব্য 

কলা খাওয়ার বিভিন্ন অপকারিতা রয়েছে,তাই বলে কলা যে একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে তা নয়। কলা খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী যদি খান তাহলে কোন সমস্যা নেই। অপকারিতার থেকে উপকারই বেশি। 

আমাদের দেশে কলাই একমাত্র ফল যেটা সকল শ্রেণির মানুষই কিনে খেতে পারে। অথবা বাড়ির চারপাশে চারা গাছ লাগিয়ে খেতে পারে। কলা খেলে আমরা অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি থাকতে পারি। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিপায়। তাই আমরা রোজ ১-২ টি কলা খাওয়ার অভ্যাস করবো। আশা করি আমাদের আজকের এ আর্টিকেল আপনাদের কাজে আসবে। আমাদের অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url