৭ দিনে সর্দি-কাশি দূর করার উপায়

ভূমিকা

ধুলাবালি, অপরিষ্কার পরিবেশ, সর্দি হয়েছে এমন ব্যাক্তির সাথে মেলামেশা করা ইত্যাদি সর্দি-কাশি সৃষ্টির কারণ। এছাড়াও শীতকালে অথবা গ্রীষ্মের শুরুতে আবার শেষে সকল মৌসুম পরিবর্তন এর সময়ই মানুষের ঠান্ডা লাগা যেমন : সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। 

পরিবারের একজন সদস্যরই যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাহলে তার থেকে বাকি সদস্যদেরও ছড়ায়। এই ঠান্ডা লাগা অবস্থায় কোন কিছু করে শান্তি পাওয়া যায় না। অনেকে বিরক্ত বোধ করেন। এবং দ্রুত ঠিক করার জন্য ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু নরমাল সর্দি-কাশি হলে এটা ঘরোয়া উপায়েও সারানো সম্ভব। এবং বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাহলে চুলুন দেখে আসি কি কি উপায়ে আমরা নিজেদের সর্দি-কাশি ঘরয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে আনবো।

সর্দি-কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়

  • গরম পানি : ঠান্ডা লাগলে শুধু যে নাক দিয়ে পানি বের হয় তা নয় তার সাথে কারোর কারোর প্রচুর পরিমাণে গলাব্যথা হয় আবার কারোর গলায় খুসখুস ভাব হয়। এটা দূর করার জন্য কুসুম গরম পানি খেতে হবে। এবং গরম পানি দিয়ে গরগরানি করতে হবে। আমরা যে খাবার পরে যে নরমাল পানি খাই সেটা বাদদিয়ে এ সময়,পানি হালকা গরম করে নিয়ে বেশ কয়েক বার খেতে হবে তাহলে আরাম পাওয়া যাবে। 
  • আদা ও লেবু দিয়ে চা : একদিনে চার পাঁচবার আদা ও লেবু দিয়ে চা করে খেতে হবে। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং অল্প পরিমাণে ভিটামিন-বি বিশেষ করে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন। 
  • এবং আদাতে রয়েছে ফেনোলিক ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান। এই ফাইটোকেমিক্যাল গুলো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়তে পারে তাই সাধারণ সর্দি কাশি এবং জ্বরে  আদা খেলে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যায়।
  • শুধু লেবুর রস : আমরা সবাই জানি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। তাই ৩-৪  টা লেবু রস করে আর কিচ্ছু না। শুধু লেবুর রসটাই চিপে খেয়ে নিতে হবে।২-৩ দিন এভাবে খেলেই দ্রুত সর্দি ভালো হয়ে যায়। 
  • তুলসি পাতা এবং মধু: তুলসি গাছ একটি ঔষধী গাছ হিসেবে পরিচিত। এবং মধু তে রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, জিংক ও কপার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। প্রাচীনযুগ থেকেই সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঠাণ্ডা ও সর্দিজনিত যেকোনো সমস্যায় তুলসী রস ও মধু একত্রে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • কালোজিরা: বলাহয় সকল রোগের মহৌষধ কালোজিরা। এটি মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরির সতেজ থাকে এবং ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা অসুবিধা দূর করে। সর্দি-কাশির সময়ে কালোজিরে ভর্তা বা কালোজিরে বাটা খুবই উপকারি। সর্দির মুখে এই বাটা খুবই উপকারি। এছাড়াও সর্দি বুকে বসে গেলে কালোজিরে বাটার প্রলেপ দিতে পারেন কপালে। কালোজিরের বাটা শ্বাসকষ্ট কমায় বলেও মনে করেন বহু বিশেষজ্ঞ।

উপরের বিকল্প থেকে যেকোনো ২-৩ টি আপনার সর্দি-কাশি হলে মেনে চলে দেখবেন খুবই দ্রুত আরাম পাচ্ছেন। বিকল্প গুলো বাস্তবে করার পরও যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে  চিকিৎসা নিতে হবে

  1. ঘরয়া উপায়ে যদি না নিয়ন্ত্রণে আসে! সর্দি-কাশি যদি ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে তখন আপনাকে চিকিৎসক এর কাছে যেতে হবে। 
  2. ঠান্ডা একবার লাগছে একবার ভালো হচ্ছে এরকম সমস্যা হলেও চিকিৎসক এর কাছে যেতে হবে। 
  3. তিন মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর আসলে অথবা খুব নিস্তেজ হয়ে পড়লে, কিংবা যেকোনো বয়সী শিশুকে নিয়ে শঙ্কা থাকলে চিকিৎসক এর কাছে নিবেন।
  4. ঠান্ডা বা জ্বর এর সময় মাথাব্যথা, বমি, জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার মতো অসুবিধা হলে দ্রুত চিকিৎসক এর কাছে যেতে হবে। 
  5. শ্বাসকষ্ট হলে,ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ফুসফুসের রোগ থাকলে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন।

সর্দি কাশির ওষুধ 

সর্দি-কাশি হলে ওষুধ না খেলেও নির্দিষ্ট সময়ে সেরে যায়। আবার ঘরোয়া উপায়েও মেলে কিছুটা আরাম। তারপরও অনেকে ওষুধ সেবন করতে চান দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য। চিকিৎসক রা ঠান্ডা লাগলে কিছু ওষুধ সাজেস্ট করেন। যেমন:

  1. টমিফেন সিরাপ: সিরাপটি  শুষ্ক কাশি এবং তীব্র কাশি দূর করে। এই সিরাপটি বড়দের কাশির সিরাপ হিসাবে চিকিৎসক রা সাজেস্ট করে থাকে। কিছু কিছু সময় এই সিরাপ সেবনের কারণে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  2. প্যারাসিটামল : জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। এটি হালকা অ্যালেনেজিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ, জ্বরের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি সর্বাধিক ব্যবহৃত ব্যথা রিলিভারে দ্বারা হয়ে থাকে। 
  3. তবে প্যারাসিটামল সেবন চলাকালে অন্য কোনো ব্যথার ঔষধ, কফ সিরাপ অথবা সর্দি-কাশির হারবাল ঔষধ সেবনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 
  4. অ্যান্টিহিস্টামিন: নাকে পানি পড়া এবং হাঁচি কমানোর জন্য ডাক্তার এই ধরনের ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
  5. কাশির লজেন্স: অনেকেই খুসখুসে কাশিতে কাশি নিরোধক লজেন্স সেবন করেন। এই লজেন্সগুলোতে কিছু সময়ের জন্য আরাম পাওয়া যায়। এসব লজেন্স গলার প্রদাহ উপশম করে এবং খুসখুসে কাশি বন্ধ করে। তবে মেন্থলযুক্ত সব লজেন্সই এই কাজ করে না।

পরিশেষে 

আপনি যদি সর্দি-কাশিতে ভূগে থাকেন তাহলে প্রথমে চেষ্টা করবেন ঘরোয়া উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার। উল্লেখিত মেডিসিন গুলো অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর না হলে ভালো একজন চিকিৎসক এর কাছে যাওয়াই শ্রেয়। আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের কাজে আসবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url