শোলা কচুর ছয়টি পুষ্টিকর রেসিপি

ভূমিকা 

আমরা সবাই কমবেশি কচু সবজিটির সাথে পরিচিত। কারণ এটি বাংলাদেশে সহজলভ্য। আমরা আমাদের চারিপাশেই দেখতে পাই এগুলো জন্মে উঠছে। কচুর কিছু প্রজাতি আছে। যেগুলোর পাতা, ডাটা,গুঁড়ি সবই খাবার যোগ্য। কিন্তু বুনো প্রজাতির কচু সব গুলো খাবার উপযোগী হয় না। কচু সহজলভ্য হলেও কচু কিন্তু নানান পুষ্টি গুণে ঠাসা। কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ,বি,সি,ক্যালসিয়াম, লৌহ। যে কচু এতো গুরুত্বপূর্ণ সেই কচু অনেকে খেতে চায় না, অবহেলা করে। অনেকেই কচুর কথা শুনলেই নাক সিটকান। আজকে শোলা কচুর এমন কিছু রান্নার পদ্ধতি বলবো যেটা ট্রাই করে দেখতে পারেন। মুখে লেগে থাকবে। শুধু কচুই খেতে চাইবেন।

১. শোলা কচুর ডাটা দিয়ে কৈ মাছের ঝোল

প্রথমে কচুর ডাটা ছিলে ছোট করে (১.৫ সে.মি) কেটে নিতে হবে। ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তার পরে চুলোয় কড়াই বসিয়ে তাতে ১০-১৫ মিলি তেল গরম হতে দিন। তেলের মধ্যে পেয়াজ কুচি ছেড়ে দিন। পেয়াজ হাল্কা নরম হয়ে আসলে কয়েকটি আস্ত জিরা ছেড়ে দিন তারপর পেয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো এবং লবণ পরিমাণ মতো দিয়ে কষতে থাকুন। মসলা তেল ছেড়ে দিলে তাতে আগে থেকেই রেডি করা কৈ মাছ গুলো ছেড়েদিন। একটু নাড়াচাড়া করে ৫-৬ মিনিট মিডিয়াম আচে ঢেকে রান্না করুন। ঢাকনা খুলে কড়াই থেকে মাছ উঠিয়ে নিয়ে সেই মসলার মধ্যে এবার কচুর ডাটা গুলো ছেড়ে দিন। তারপর ৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। ঢাকনা খুলে দেখবেন কচু কমে গিয়েছে এবং পানি ছেড়ে দিয়েছে। সাথে আপনি ২৪০ মিলি পানি যুক্ত করবেন। তারপর মাছগুলোও ছেড়ে দিবেন। তারপর ৫ মিনিট রান্না করুন। তরকারিতে বলক আসলে, পানি একটু গায়ে গায়ে চলে আসলে নামিয়ে ফেলুন। রেডি  আপনার কচুর ডাটা দিয়ে কৈ মাছের ঝোল। অনেক সাধারণ রান্না কিন্তু গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করলে হয়ে ওঠে অসাধারণ। এক প্লেট ভাত যেন নিমিষেই শেষ।

২.সরিষা দিয়ে শোলা কচুর গুঁড়ি ভর্তা 

গুঁড়ি ভালো করে কেটে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর চাক চাক করে কেটে কড়াইয়ে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে কচু পানি থেকে উঠিয়ে নিন। অন্যদিকে পাটায় মিহি করে ৪ চা চামচ সরিষা বেটে নিতে হবে। তারপর পেয়াজ সামান্য তেলে ভেজে নিয়ে সেই পেয়াজের সাথে পরিমাণ মতো শুকনো মরিচ ভাজা এবং লবণ দিয়ে ভালো করে মাখতে হবে। তারপর সেখানে সেদ্ধ কচু এবং সরিষা বাটা দিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে মাখতে হবে। ব্যাস রেডি হয়ে গেল কচুর গুঁড়ি ভর্তা। আরও অনেক ভাবেই ভর্তা করা যায় তবে এভাবে একদিন করে দেখবেন।

৩. চিংড়ি আর কচুর গুঁড়ি ঘন্ট

প্রথমে কচুর গুঁড়ি পরিষ্কার করে বড় বড় কিউব করে কেটে নিতে হবে। তারপর সেটাকে সেদ্ধ করে নিতে হবে। 

এবার একটি কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, কয়েকটি কাঁচা মরিচ চেরা, ২-৩ টি তেজ পাতা, আদা বাটা ১/২ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো  ১ চা চামচ, মরিচের গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদ এবং লবণ পরিমাণ মতো দিয়ে কষতে থাকুন। কষানো হলে সামান্য পানি দিয়ে দিন (১/২ কাপ)। তারপর তার মধ্যে চিংড়ি ছেড়ে দিন। ওপরে তেল উঠে আসা ভাব হলে, সেদ্ধ করে রাখা কচুর গুঁড়ি গুলো আলগো করে ভেঙ্গে দিয়ে দিন। একটু নাড়াচাড়া করে সেখানে পরিমাণ মতো গরম পানি দিয়ে দিন। ১০ মিনিট রান্নার পর ঘাটুনি দিয়ে একটু ঘেটে নিন। অন্যত্র একটি পাত্রে সামান্য সরিষার তেল গরম করে ফোড়নে কয়েকটি আস্ত জিরা এবং রসুন কুচি দিন। রসুন বাদামী হয়ে আসলে সেই বাগাড় ঘণ্টর মধ্যে ঢেলে দিন। ব্যাস রেডি হয়ে গেল চিংড়ি আর কচুর গুঁড়োর ঘন্ট। গরম গরম ভাতের সাথে গরম ঘন্ট আর সাথে লেবু দিয়ে পরিবেশন করুন।

৪. শোলা কচু দিয়ে দেশি মুরগির ঝোল 

এই রেসিপির জন্য লাগবে কচুর নিচের অংশ অর্থাৎ কচুর গুঁড়ি। কচুর গুঁড়ি কিউব কিউব করে আলুর মতো করে কেটে ধুয়ে নিন। তারপর তাতে সামান্য লবণ এবং হলুদ মিশিয়ে হাল্কা করে তেলে ভেজে নিতে হবে। ভাজা শেষ হলে সেই পাত্রেই সেই তেলেই এক কাপ পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে ভাজতে হবে। পেঁয়াজ বাদামী হয়ে আসলে তার মধ্যে আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়ো, হলুদ, লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। তারপরে দারচিনি ২ টুকরো, সাদা এলাচ ৪-৫ টা, লবঙ্গ ২-৩ টা, ২ টি তেজপাতা যুক্ত করে কষতে থাকুন। মসলা থেকে ত ছাড়লে সেখানে দেশি মুরগি ছেড়ে দিন দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। এক দুইবার খুলে নাড়াচাড়া করে নিবেন। তারপর যুক্ত করবেন ভাজা জিরে গুঁড়ো 2 চা চামচ। তারপরে কষা মাংসে গরম পানি দিয়ে দিন, পানি দেওয়ার পার একবার বলক আসলেই ভেজে রাখা সেই কচুর গুঁড়ি গুলো দিয়ে দিন। তারপর আরও কিচ্ছুক্ষণ রান্না করতে হবে। পানি কমে আসলে তরকারি তে ১ চা চামচ গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।

৫. শুটকি দিয়ে কচুর পাতা ভর্তা

অনেকে আছেন যাদের শুটকি অনেক পছন্দের খাবার। তারা এই ভর্তাটি করে খাবেন অনেক ভালো লাগবে।

প্রথমে একটি খোলায় কয়েকটি যেকোনো ধরনের শুটকি ঝলসিয়ে নিন বা হাল্কা পুড়িয়ে নিন। অন্যদিকে শোলাকচুর জালা পাতা গুলো সংগ্রহ করে কুচি করে কেটে সামান্য তেল, লবণ, হলুদ দিয়ে ভেজে নিতে হবে।খুব বেশি ভাজতে হবে না। তার পর ২-৩ টি রসুনের কোয়া আর ৫-৬ টি কাচা মরিচ সামান্য তেলে একটু ভেজে নিতে হবে। তারপর শুটকি সহ সব উপকরণ একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে অথবা পাটায়। তারপর ২ টি পেয়াজ কুচি করে সামান্য সরিষার তেল দিয়ে পেস্ট টি মাখিয়ে নিতে হবে। মাখানো শেষেই প্রস্তুত হয়ে যাবে মজাদার ভর্তাটা।

৬. কচুর গুঁড়ি ভাজা 

প্রথমেই কচুর গুঁড়ি পরিষ্কার করে ছিলে নিতে হবে। তারপর সেটা কুচি করে কেটে নিতে হবে। একদম যে কুচি কুচি হতে হবে তা নয়। কাটার পরে গরম পানিতে লবণ দিয়ে ৫০% সিদ্ধ করে নিবেন। পানি ঝড়িয়ে শুকোতে দিবেন। শুকানো হয়ে গেলে এটি অনেক দিন সংগ্রহ করতে পারবেন। যখন খেতে ইচ্ছে করবে তখন শুকনো কচু বের করে ডুবো তেলে ভেজে উঠিয়ে নিবেন, ওপর দিয়ে একটু লবণ বা বিটলবণ ছিটিয়ে দিবেন। এটি খেতে চিপস বা পাপড় এর মতো হয়। ভাত অথবা খালি মুখেও খেতে পারেন। অনেক মজার হয়।

আমাদের মন্তব্য 

কচু উপকারী সবজি তবে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো। 

কচু শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কচু রক্তশুন্যতা দূর করে। সেইজন্যই চিকিৎসকরা নিয়মিত কচু খেতে পরামর্শ দেন। নিয়মিত কচু খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে, ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে,আরও রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টিগুণ। তাই আপনারা মেন্যু তে কচুর তরকারি রাখবেন। আর আজকের রেসিপি গুলো ট্রাই করে দেখবেন কেমন লাগে। ভালো লাগলে আমাদের জানাতে ভূলবেন না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url