গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় | স্বল্প সময়ে দূর করে ফেলুন গ্যাসের সমস্যা।

ভূমিকা 

অ্যাসিডিটি হল এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে বেশি অ্যাসিড তৈরি করে। পাকস্থলীর গ্যাসট্রিক গ্ল্যান্ডে অতিরিক্ত অ্যাসিড যাওয়ার ফলে এই গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। মূলত এটি হয় মানুষের খাদ্যাভ্যাস এর জন্য। অনেক বেশি মসলাদার, তেলযুক্ত ভারি খাবারের ফলে অনেকের গ্যাস হয়। আবার খালি পেটে থেকে অতিরিক্ত চা, কফি, ধুমপান, মদ্যপানের কারণেও গ্যাস হয়ে থাকে। 

অনেকে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার কারণে অশান্তি তে ভূগেন। আজ কিছু খাদ্যাভ্যাস এর কথা বলবো যেগুলো আপনি নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। 

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়

গ্যাস কমাতে হলে আপনাকে প্রথমতই আপনার খাদ্যাভ্যাস এর পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। অতিরিক্ত খাবার এবং  গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গ্যাস কমাতে যেসব খাবার খাবেন বা খাদ্য তালিকায় রাখবেন :

  1. পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামের এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে। পেঁপে ভর্তা, পেঁপের তরকারি, বা কাচা পেঁপে সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন। 
  2. জিরা: জিরা  হজমের সুবিধার জন্য জনপ্রিয়। এটি পেট ফাঁপা,বদহজম, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা গুলি উপশম করতে সাহায্য করে। জিরা এনজাইম নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে এবং গ্যাস গঠন কমিয়ে হজমে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জিরা মিশিয়ে সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে ছেঁকে এই পানি পান করুন। পেট পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি বদহজম থেকেও মুক্তি মিলবে। অথবা জিরার চা ও খেতে পারেন। 
  3. শসা: শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে,এজন্য এটি হজম হতে সময় নেয় না। শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকর। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়। শসার পাতলা ঝোল অথবা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। গ্যাসের সমস্যা হবে না। 
  4. দই: দই শরিরের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এতে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা কমে আসে। এই জন্যই দেখবেন যে কোন অনুষ্ঠানে ভারী খাবার পরে পাতে দই পরিবেশন করা হয়। খাবারের পরে টক দই খাওয়া বেশি ভালো।  
  5. আদা: আদা সব চাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে খান, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।

পেট ঠান্ডা রাখতে পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে যদি আপনি কোলন পরিষ্কার রাখতে চান। পানির পাশাপাশি ওরস্যালাইন ও ডাবের পানিও পান করতে পারেন। এতে উপকার পাবেন। তবে হার্ট অথবা কিডনির সমস্যা থাকলে বেশি পানি পান না করাই উত্তম। আর খাদ্য তালিকায় রেজিস্টেন্স স্টার্চ যুক্ত খাবার রাখবেন। এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যা পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

এগুলো খ্যাদ্যাভাসই কিন্তু পারবে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে। তাই সুস্থ থাকতে এগুলো উপাদান নিজের খাদ্য তালিকায় রাখুন।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে যেসব খাবার 

কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে সুস্থ রাখে, যেগুলো খেলে দ্রুত হজম হয়, গ্যাস হয় না। কিন্তু আবার এমন খাদ্যও রয়েছে যেগুলো গ্যাস তৈরি করে। যেমন :

মুলা: অনেক মুলা খেতে পছন্দ করেন তাই শীতকালে প্রতিদিন এই সবজি খাদ্য তালিকায় রাখেন। কিন্তু জানেন কি? এই সবজি বাড়িয়ে দিতে পারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। সেখান থেকে পেট ফাঁপা, পেট ফুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই মুলার তরকারি খাওয়ার পরপর জিরা ভেজানো পানি বা পুদিনা পাতা খেতে পারেন। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়বে না। অথবা মুলা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। অনেকে আবার কাচা মুলা সালাদ হিসেবে খান, এতে করে গ্যাসের সমস্যা বেশি হতে পারে। 

ছোলা: ছোলা অনেক উপকারী খাবার কিন্তু ভূল নিয়মে খেলে বা পরিমাণে বেশি খেলেই হবে গ্যাস। অনেকে দেখবেন রমজান মাসে ইফতারে ছোলা রাখে কিন্তু সেটি রান্না করা হয় অতিরিক্ত মসলা, তেল ব্যাবহার করে। তাই অনেকে গ্যাসের সমস্যায় ভূগেন। আবার যাদের হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য তো ছোলা উপকারী না ই । তাই হজমসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি অসুখে ছোলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। 

ফুলকপি: পুষ্টিবিদরা বলছেন, ফুলকপিতে রয়েছে সালফারযুক্ত যৌগ। যাকে বলা হয় ‘গ্লুকোসিনোলেটস’। যার ফলে পেট ফাঁপা, বদহজম, গ্যাস-অম্বল হতে পারে। তাই যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তারা ফুলকপি খাওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। 

মসুর ডাল: অনেকর প্রতি বেলাই পাতলা মসুর ডাল ছাড়া যেন খাওয়াই হয় না। কিন্তু একটা সময় এসে তারা পরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়।আবার কারও কারও মসুর ডাল খেলে পেট ফুলে যাওয়া সমস্যা বাড়তে থাকে। মসুর ডালে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট এবং খনিজ সমৃদ্ধ, মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা গ্যাস সৃষ্টি করে। পেট ফোলার সমস্যা থাকলে মসুর ডাল পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করুন। দরকার হলে এড়িয়ে চলুন। 

বাদাম: বাদাম অনেক ভারি খাবার। তাই এটি হজম হতে প্রচুর সময় লাগে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের বাদাম এড়িয়ে চলা উচিত বা পরিমাণে কম খাওয়া উচিৎ। কারণ অত্যাধিক বাদাম খাওয়ার ফলে পিছু নিতে পারে গ্যাস বা বদহজম।

কয়েকটি গ্যাসের ওষুধের নাম 

এন্টাসিড : এন্টাসিড হলো একটি গ্যাসের ঔষধ। এটি পাকস্থলির অতিরিক্ত অম্লকে প্রশমন করে এবং সাধারণত বুকজ্বালা ও বদহজম রোধে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টাসিড গ্রহণ করা উচিত যখন গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটি সবচেয়ে বেশি বাড়তে থাকে। 

ফিনিক্স ২০ : Finix 20mg পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদনে বাধা দিয়ে কাজ করে। চিকিৎসক রা গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য এই ওষুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

ওমিপ্রাজল: গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালাপোড়া করা এবং বদহজমের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধের নাম ওমিপ্রাজল। পাকস্থলীর আলসারের চিকিৎসায় এবং আলসার প্রতিরোধের জন্যও ওমিপ্রাজল সেবন করা হয়।

ম্যাক্সপ্রো : ম্যাক্সপ্রো গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে আমরা চিনে থাকি তাই গ্যাস্ট্রিকের অতিরিক্ত সমস্যা হলে বুক জ্বালাপোড়া করলে এই ওষুধটি সেবন করা হয়ে থাকে। 

বি:দ্র: অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া এগুলো ওষুধ খেতে যাবেন না। উপরের সবকটিই গ্যাসের ওষুধ কিন্তু রোগের ধরণ অনুযায়ী সুপারিশকৃত, তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করা উচিত না।

পরিশেষে 

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট থেকে বড় সবারই এই একই সমস্যা। তবে একটু খ্যাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে আনলেই একটু মেনে চললেই আপনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনি যদি অমান্য করে প্রচুর ফাস্ট ফুড খান, তেলযুক্ত খাবার খান, ভারী খাবার বেশি খান তাহলে তো আপনার গ্যাস হবেই। আর গ্যাস হলেই যে ওষুধ খেয়ে নেন। জানেন তো অতিরিক্ত গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। তাই গ্যাস দূর করতে আসুন নিজেদের অভ্যাস বদলে ফেলি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url