স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর উপায়
ভূমিকা: অনেকে নিজের ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকে। একটু খেলেই বেড়ে যায় ওজন। ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার জ্বালায় মানুষ পছন্দও করছে না, ভেঙ্গে যাচ্ছে বিয়ে। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধির ফলে অনেকের ধরে যাচ্ছে নানান ধরনের রোগ বালাই। তাই আপনাদের কথা চিন্তা করেই আমাদের আজকের এ আর্টিকেল টি। এটা পড়ে আপনি জানতে পারবেন স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে।
দ্রুত ওজন কমানোর ট্রিকস
ওজন নিয়ে অনেকে নিজ নিজ ঝামেলায় পরেন। অনেকে ওজন বেশির জন্য কটু কথা শুনায়। বিভিন্ন উপায়ে ওজন কমানো যায় তবে স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর কয়েকটি কার্যকারি উপায় রয়েছে। যেমন:
কিটো ডায়েট: কিটো ডায়েট একটি খুব কম কার্বোহাইড্রেট খাদ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। মূলত এই ডায়েটের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট কে বিদায় করে দেওয়া। শরীরে চর্বি গলতে থাকলে শরীরে বদ্ধ কার্বোহাইড্রেট দূর হতে থাকে ফলে দ্রুতই ওজন কমে যায়। কিটো ডায়েট অনেক ইফেকটিভ একটি ডায়েট। অনেকে এটা করার জন্য সাজেস্ট করেন।
সূচিপত্র
এবার চলুন দেখে আসি কিভাবে করা যায় কিটো ডায়েট :
কিটো ডায়েট করার নিয়ম
কিটো ডায়েটে মেইনলি প্রোটিন খাওয়াই মূল উদ্দেশ্য। এতে কার্ব এক্সট্রিম লেভেল কম থাকবে। এর ফলে আপনি যা খান না কেন আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং এই প্রোট্রিন যুক্ত খাদ্য আপনাকে সারা দিন চলার শক্তি যোগাবে।
কিটো ডায়েটে যেসব খাবার খেতে হবে:
- তেলের বদলে বাটার অথবা ঘি অথবা অলিভ অয়েল ব্যাবহার করতে হবে।
- সকল ধরনের মাংস খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই সোয়াবিন তেলে রান্না করা নয় এবং অতিরিক্ত মসলা দার নয়। মাংস খাবেন খালি মুখে ভাত এড়িয়ে চলবেন
- সকল ধরনের মাছ খেতে পারবেন। কারণ আমিষ আপনাকে প্রোটিনের যোগান দিবে।
- ডিম, দুধ ও খেতে হবে। দুধে রয়েছে সকল ধরনের পুষ্টিগুণ। তাই এটি আপনাকে শক্তি যোগাবে।
- সকল ধরনের সবজি এবং শাক পাতা। বেশিরভাগ ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা মেটানো যায় সবজি খেয়ে।
- সকল ধরনের ফল বা সিজনাল ফল খেতে পারেন। পেটের মেদ ঝরাতে ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া ডায়েটের জন্য চেহারায় যে ইফেক্ট পরে ফল খেলে তা হয় না।
আপনার ডায়েট চার্টে এগুলো খাবার তিন বেলায় ভাগ করে নিবেন, যেমন একবেলা সবজি খেলেন, খেলেন, দুপুরে, মাছ মাংস, বাদাম খেলেন, বিকেলে ফ্রুটস খেলেন রাতে স্যালাদ খেলেন ডিম, দুধ খেলেন। এভাবে এক মাস কন্টিনিও করলেই আপনি স্বল্প সময়ে ওজন কমাতে সক্ষম হবেন। আপনি যদি প্রপার এই ওয়েতে চলেন তাহলে মাসে ৭-৮ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
ওজন কমানোর কার্যকারি পাঁচটি ব্যায়াম
স্বল্প সময়ে ওজন কমাতে চাইলে ডায়েটের পাশাপাশি আপনাকে করতে হবে নিয়মিত শরির চর্চাও। শরীরের সঠিক অনুপাত অর্জনে শারীরিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে পাঁচটি কার্যকারি ব্যায়ামের নাম উল্লেখ করছি।
সাঁতার: ওজন কমানোর জন্য সাঁতারকে সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও এই ধরনের ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টকে শক্তিশালী করে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন আধা ঘণ্টা ধরে সাঁতার কাটলে ভালো ফল পাবেন। সাঁতার কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
সাইক্লিং: ওজন কমাতে আরও একটি কার্যকারী ব্যায়াম হলো সাইক্লিং। আপনি রোজ আধা ঘন্টা সাইক্লিং করতে পারেন। প্রতিদিন এক ঘণ্টা সাইক্লিং এর ফলে আপনি ৫০০-৮০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বার্ন করতে পারবেন।
ট্রেডমিলে ব্যায়াম: ট্রেডমিলে ব্যায়াম করলে আপনার সমস্ত শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেশ গতি পায়। এ জন্য ব্যায়ামের সর্বাধিক সফলতা একটি ট্রেডমিল থেকে পাওয়া যায়। আপনি রেগুলার তিন দিন পর্যন্ত ট্রেডমিলে প্রথমে ১০ মিনিট হাল্কা স্প্রিড দিয়ে হেটে নিন আসতে আসতে স্প্রিড বাড়াবেন। রেগুলার তিন দিন এর পর একদিন ব্রেক দিবেন। এভাবে কন্টিনিউ করলে সুফল নিজেই লক্ষ করবেন।
ক্রাঞ্চ: ক্রাঞ্চ পেটের ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত। যাদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি তারা এ ব্যায়াম টি করতে পারেন। প্রথমেই মাদুর বিছিয়ে নিন তারপরে হাটু ভাজ করে বুকের কাছে আনতে চেষ্টা করুন। তার পর আসতে আসতে মাথার পেছনে দুই হাত দিয়ে মাথা তুলে আনার চেষ্টা করুন। এ ব্যায়ামে বেশি চাপ পরবে পেটে। সিটআপের মতো, ক্রাঞ্চ আপনাকে পেশী তৈরি করতে সহায়তা করে।
হাঁটা: বিশেষজ্ঞ দের মতে হাঁটার ওপরে কোন ব্যায়াম নেই। হাঁটা এমন একটি কার্যকারি ব্যায়াম হবে যে এটা আপনার পুরো শরির এর চর্বি বার্ন করতে সাহায্য করবে। তাই অন্যান্য ব্যায়াম গুলো করার সময় না পেলেও রোজ হাটাহাটি করতে ভূলবেন না। আপনি রোজ প্রমে ৩০ মিনিট করে হাঁটা শুরু করবেন। আসতে আসতে ১ ঘন্টার মতো হাটাহাটি করার অভ্যাস করবেন। তাহলে ওজন বাড়ার কোন প্রশ্নই আসবে না।
ওজন কমাতে যেগুলো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
বর্তমানে ডায়েট মেনে সুস্থ থাকার চেষ্টা করছেন অনেকেই। অনেকেই স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে কিটো ডায়েট কেই বেছে নিয়েছেন। কিন্ত জানেন কি এ ডায়েটে থাকা অবস্থায় সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না? যেসব খাবার এই ডায়েট চার্ট ফলো করার সময় ভূলেও খাবেন না সেগুলো এক নজরে দেখে নিন:
চিনি এবং চিনি দিয়ে তৈরি এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। ফল থেকে যতটুকু সুগার পাওয়া যায় সেটাই উপকারী।
উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার যেমন: ভাত, ফাস্ট ফুড পাওরুটি এসব খাবেন না। ভাত খেলে প্রচুর পরিমাণে ওজন বৃদ্ধি পায়।
শর্করা জাতীয় সবজি ও খাওয়া যাবে না যেমন: আলু, মিষ্টি কুমড়া।
অতিরিক্ত তেল মসলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তেলের বদলে বাটার অথবা ঘি ব্যাবহার করতে হবে।
সকল প্রকার কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া বাদ দিতে হবে। তবে চর্বি কমানোর জন্য গ্রিন টী অথবা ব্ল্যাক কফি চিনি ছাড়া খেতে পারেন, অথবা হাল্কা কুসুম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
বাহিরের কোন প্রকার ভাজা পোরা বা প্যাকেট জাত খাবার খাওয়া যাবে না, এগুলো শরির মোটা করে তুলে।
শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়। আমাদের শরিরকে সুস্থ রাখার জন্য এসব খাবার আমাদের এড়িয়ে চলাই উত্তম। এগুলো খাবার ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে শরিরে বয়ে নিয়ে আসে নানা রকমের রোগও।
কিটো ডায়েটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সব কিছুরই কোন না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেই। তেমনি কিটো ডায়েটেরও রয়েছে। যেমন: কিটো ডায়েটে সব খাদ্য উপাদান প্রয়োজনীয় অনুপাতে থাকে না। অনেকে তাড়াতাড়ি ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনেন, যাতে ক্যালরির সঠিক অনুপাত থাকে না। ফলে মানুষের শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
- কিটো ডায়েট এ যেহেতু শর্করা একদম ই খাওয়া হয়না তাই শরীর দূর্বল হয়ে যেতে পারে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- এ ডায়েটের ফলে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে মনোযোগহীনতা সহ অতিরিক্ত ঘুম, কাজকর্মে অলসতা ,খিটখিটে মেজাজ, ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে দেখা যায়।
- আমরা বাঙ্গালি। আমাদের পেট ভাত খেয়ে খেয়ে অভ্যস্ত। কিটো ডায়েট শুরুর ফলে হঠাৎ করে ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে দিলে মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব পরে।
- অনেকে এ ডায়েট করা অবস্থায় দূর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
- যারা কিটো অনুসরণ করেন তাদের ফোলাট- থিয়ামিনের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি-6, বি-12, সি, এবং এর অভাব দেখা দেয়। ফলে হাড়, বিপাক প্রক্রিয়া, মাড়ি, লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণ যাদের অতিরিক্ত ওজন তাড়া দ্রুত সময়ে ওজন কমানোর জন্য এই চার্ট ফলো করেন। সাধারণ একটা নির্দিষ্ট মাস অনুযায়ী এ ডায়েট চলে। তবে দ্রুত ওজন কমানোর থেকে সময় নিয়ে ওজন কমানোই ভালো। তারপরও যদি আপনি কিটো ডায়েট করতে চান তাহলে একজন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে করতে পারেন। তবে একবার ওজন কমিয়ে ফেললে অল্প করে শর্করাও খাবেন।
লেখকের মন্তব্য
ওজন বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের ঝামেলার শেষ নেই। তাই স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে কিটো ডায়েট বেশির ভাগ মানুষ বেছে নেন। কিন্তু কিটো ডায়েট বাদেই আপনি এমনিই আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ডায়েট করতে পারেন যেমন শর্করা খাবেন কিন্তু অতিরিক্ত নয়। আপনি সাদা চালের ভাত বাদ দিয়ে লাল চালের ভাত খেতে পারেন অথবা দুবেলা রুটি খেতে পারেন একটি করে। সব কিন্তু খাওয়ার একটা পরিমাণ রয়েছে, সেই পরিমাণ অনুযায়ী ই চলেন আর রোজ হাটাহাটি করেন, কাজ করেন, দেখবেন কিটো ডায়েট করার প্রয়োজনই পড়ছে না। এতে করে আপনি সুস্থ,ফুড়ফুড়ে, হাল্কা অনুভব করবেন।
আশা করি আজকের এ আর্টিকেল টি আপনাদের উপকারে আসবে
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url