বিয়ে করার উপযুক্ত সময় কখন?
ভূমিকা
বিয়ে করার উপযুক্ত সময় জানার প্রথমে আমাদের জানা দরকার বিয়েটা আসলে কি? বর্তমান জেনারেশনে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই যে বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। বিয়ে টিকছে না। এটি ৬০% হয় উপযুক্ত সময়ে না বিবাহ করার কারণে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বিয়ে কাকে বলে?
বিয়ে শব্দটা ছোট হলেও এটার দায়িত্ব অনেক ভারী। বিয়ে হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যে আইন, রীতিনীতি, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ এবং মনোভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি আইনগত এবং সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। অর্থাৎ বিয়ের অর্থ হলো দুটি জিনিস একত্রিত করা বা বন্ধন অথবা আপনি চুক্তি ও বলতে পারেন।
বিয়ে এমন সুন্দর মাধ্যম যে বিয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। শুধু দুজন মানুষ না দুটি পরিবারের। বিয়ের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, কেয়ারিং চলে আসে। তাই বিয়ে শব্দটি ছোট হলেও এর ব্যাখ্যা অনেক গভীরে।
বিবাহের পাঁচটি প্রকারভেদ
বিবাহ সম্পর্কে তো জানলাম। কিন্তু আমরা কি জানি বিবাহের প্রকারভেদ সম্পর্কে। বিবাহের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। তার মধ্যে পরিচিত ৫ টি প্রকারভেদ তুলে ধরছি :
১.একক বিবাহ: একক বিবাহ হলো একটি প্রথা যা একজন ব্যক্তিকে বৈধভাবে এক সময়ে শুধুমাত্র একজন পত্নীকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়। যদিও বাংলাদেশের মানুষ প্রাচীনে দুই তিনজন পত্নী রাখতো। তবে বর্তমানে এটা আর দেখা যায় না। বর্তমানে আমাদের সমাজেও একক বিবাহের চর্চা বেশি। একক বিবাহ সাধারণত দুইটি ফর্মে উপস্থিত হওয়া,একগামীতা, দুই ব্যক্তির মধ্যে একটি আজীবন চুক্তি। অর্থাৎ একজনই।
২.বহুবিবাহ: একাধিক বার বিয়ে করলে তখন সেটাকে বলা হয় বহুবিবাহ। যেটা বললাম প্রথমে যে বাংলাদেশের মানুষের আগে দুই-তিনটা পত্নী থাকতো। অর্থাৎ এরা বহুবিবাহ করতো।যখন একজন পুরুষ একই সময়ে একাধিক স্ত্রীকে বিয়ে করেন, তখন তাকে বহুবিবাহ বলে । যখন একজন নারী একই সময়ে একাধিক স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তাকে বলা হয় বহুপতি ।
৩.পারিবারিক বিবাহ: যখন একটি পুরুষ এবং একটি নারী নিজ পরিবারের সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সেটাকে পারিবারিক বিবাহ বলে। সাধারণভাবে পারিবারিক বিবাহ" এর অর্থ হল আপনি আপনার বিবাহে শুধুমাত্র আপনার নিকটতম পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন । অর্থাৎ শুধু মাত্র পরিবাদের সদস্য দের নিয়েই যে বিবাহ সম্পন্ন করবেন তাই পারিবারিক বিবাহ।
৪.বাল্যবিবাহ: বাল্যবিবাহ হল অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিবাহ। অর্থাৎ বাল্য কালে যে বিবাহ দেওয়া হয় সেটাই বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ দেওয়া অপরাধ মূলক কাজ। আমাদের দেশে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭ আইনটির দ্বিতীয় ধারার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বিয়ের জন্য নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এর নিচে বিয়ে করালে সেটি বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হয়।
৫.বিধবাবিবাহ: বিধবা নারী কে পুনরায় বিবাহ করার প্রথা হলো বিধবা বিবাহ। এটি প্রাচীন একটি পদ্ধতি। সাধারণত হিন্দু নারীদের স্বামী মারা যাওয়ার পর তাদের নিষ্ঠুর ও বঞ্চনার জীবন যাপন করতে হতো। পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ভারতে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন, ১৮৫৬, প্রণয়ন করে। তখন থেকেই এই বিবাহ প্রথা প্রচলিত। বর্তমানেও অনেককে বিধবা বিবাহ করতে দেখা যায়।
বিয়ে করার উপযুক্ত সময় কখন?
অনেক মানুষ কে দেখা যায় তারা নানান কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ করে এবং বহু বিবাহ করে। এগুলো মূলত ঘটে আমারা উপযুক্ত সময়ে বিবাহ করছি না। আজকে বলবো কয়েকটি লক্ষণ বা অবস্থার কথা যেটা আপনি আপনার মধ্যে অনুভব বা দেখলে বুঝবেন যে আপনার বিয়ে করার উপযুক্ত সময় এখনি।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ : যখন আপনি দেখবেন যে আপনি ডিসিশন মেইকিং এ এক্সপার্ট হয়ে উঠেছেন, ম্যাচিউর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ্যবিলিটি আপনার মধ্য এসেছে তখন বুঝবেন আপনার মধ্যে সেই এ্যবিলিটি আসছে।
ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা: বিয়ের ক্ষেত্রে দুজন সঙ্গির ই প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে হয়। ধৈর্যই পারে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। আপনার মধ্যে যদি ধৈর্য না থাকে তাহলে আপনার বিয়ে করার উপযুক্ত সময় হয়নি।
রেস্পেক্ট করা: যখন আপনি মানুষকে ছোট করে কথা বলার অভ্যাস বাদ দিয়ে দিবেন। মানুষকে সম্মান দিবেন তখন বুঝবেন আপনার মধ্যে বিয়ে করার এ্যবিটিলি আছে। কারণ আপনার সঙ্গির প্রতি যদি আপনার রেস্পেক্ট না থাকে তাহলে সে সম্পর্কে ঝামেলা তো সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু না। যেখানে ভালোবাসার অর্থই হচ্ছে একে অপরকে রেস্পেক্ট করা।
উপার্জন করার ক্ষমতা: উপার্জন করার ক্ষমতা থাকলে তখনই বিয়ে করা উচিৎ। কারণ বিয়ের পরে আপনার স্ত্রীর দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। একটা সংসারে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। আর একজন পুরুষ কে তার পরিবার এবং স্ত্রী সবার দায়িত্বই নিয়ে হয়। তখন যদি আপনি উপার্জন না করা অবস্থায়ই বিবাহ করেন তখনই চাপ পরে যাবে এবং অশান্তির সৃষ্টি হবে।
প্রয়োজন বোধ করলে: আপনি যদি মনে হয় যে এখন বিবাহ না করলে আমি বিপথে যেতে পারি। তখন আপনি বিয়ে করে নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে: বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে বলছেন বিয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় ২৮ থেকে ৩০ বছর। এই বয়সটাতেই কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সারা জীবন কাটানোর পক্ষে সঠিক যুক্তি খুঁজে পায় মানুষ। এই বয়সেই পরিণতবোধ আসে। তারুণ্যের অস্থিরতা কাটতে থাকে।
উপরের থটস গুলো যদি আপনার মধ্যে দেখেন যে বিদ্যমান তাহলে আপনার বিয়ে করার উপযুক্ত সময় এখনই।
বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
বিয়ে করার উপযুক্ত সময় কখন সেটা তো জানা হলো। তাহলে চলেন এখন জানা জাক বিয়ের উপযুক্ত সময় কখন এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, অর্থ: বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মোতাবেক কাজ করলো না সে আমার নয়। তোমরা বিবাহ করো, কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মাতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোজা রাখে। কারণ রোজা তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী। (সুনান ইবনে মাজা: ২৩৮৩)
বর্তমান সময়ে বাবা-মারা উপার্জন না হলে সন্তানের বিবাহ করাতে চায়না যার ফলে বেড়ে গিয়েছে জেনা, তৈরি হচ্ছে অবৈধ সম্পর্ক।
যদি ছেলেমেয়ের বিয়ে করার আগ্রহ থাকে, কিন্তু স্ত্রীর খরচ বহনে অক্ষম হয় তাহলে তার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তাআলার বাণী: “যারা বিবাহে সক্ষম নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩৩]
ছেলেমেয়েকে জোরপূর্বক নয় তারা তাদের বিয়ের প্রয়োজন বোধ করলে তাদের বিয়ে দেওয়া উচিৎ। বিয়ে না করার কারণে কেউ যদি হারাম দৃষ্টি, স্পর্শ বা চুমো খাওয়ার মাধ্যমে পাপে জড়িয়ে পড়ে, তার ওপর বিয়ে করা ফরজ। যদি কোনো পুরুষ বা নারী প্রবল আশংকা বোধ করে যে বিয়ে না করলে সে ব্যভিচারের মতো হারাম কাজে লিপ্ত হবে, তার ওপরও বিয়ে করা ফরজ।
এক সাথে চারটি বিয়ে করা যাবে?
ইসলামে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হলেও একটির বেশি বিয়ে করা শর্তসাপেক্ষ করা হয়েছে, যাতে স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারার ব্যাপারে কোনো ভেদ না ঘটে। আপনি তখনই চারটি বিয়ে করতে পারবেন যখন আপনি প্রথম তিনজন কে ইকুয়ালি সব দিতে পেরেছেন। কারোর মনে কোন আক্ষেপ থাকবে না। অর্থাৎ চার নম্বর স্ত্রী কে যেমন ভালোবাসবেন, অর্থনৈতিক সহায়তা করবেন, বাকিদেরও তাই করতে হবে। তা নাহলে বাকি স্ত্রী যদি অবিচার বা ইর্ষা বোধ করেন তাহলে আপনার তখন গুণাহ হবে। আপনি পারবেন চার জন কে সমপরিমাণে সব দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে? যদি পারেন তাহলে বহুবিবাহে সমস্যা নেই।
পুরুষের ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বৈধতা প্রসঙ্গে কোরআনের বক্তব্য এমন যে, তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে-দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে বিয়ে করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩)
লেখকের মন্তব্য
বিয়ে একটি সুন্দর মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমে একটি সম্পর্কের পূর্ণতা পায়। একজন আরেক জনের সাথে সারাজীবন থাকার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পৃথীবিতে যদি কোন সম্পর্ক মধুরমতো হয় তাহলে সেটি স্বামি স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক। যেটা পূর্ণতা পায় বিবাহের মাধ্যমে। তাই বিয়ে করার উপযুক্ত সময় দেখে বিয়ে করে নিন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url