চুলের যত্নে মেহেদী পাতার ব্যাবহার

মেহেদী গাছ এমন একটি উদ্ভিদ যার পাতা ঔষধি গুণ সম্পন্ন। প্রাচীন কালে মানুষজন এ পাতার রস ব্যাথা দূর করতে ব্যাবহার করতো। এছাড়াও এটি ত্বক, চুল, নখ, রঙ্গিন করার কাজের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মেহেদী পাতা ব্যাবহার করে  কিভাবে আপনার চুলের যত্ন নিবেন সেটা নিয়ে আমাদের আজকের এ আর্টিকেল টি। 

চুলে ব্যাবহারের পদ্ধতি

  1. মেহেদী এবং লেবুর প্যাক: পরিমাণ মতো মেহেদী পাতা বেটে নিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে নিন। মেহেদীর পরিমাণ বেশি হলে লেবুর পরিমাণ আর ১ টেবিল চামচ বাড়িয়ে নিতে পারেন। ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মিশ্রণ টি চুলের গোড়া থেকে আগা অব্দি ভালো করে এপ্লাই করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি কমপক্ষে সপ্তাহে একবার করুন। এতে করে খুশকির সমস্যায় পড়বেন না। লেবু মেহেদীর এই প্যাকটি খুশকি কমাতে সাহায্য করে। 
  2. মেহেদী এবং তেল এর প্যাক: গাছের সতেজ পাতা গুলো ভালো করে পাটায় বেটে নিবেন। তারপর তাতে অলিভওয়েল অথবা নারিকেল তেল যুক্ত করে মিক্সড করুন ব্যাস হয়ে গেল প্যাকটি। মিশ্রণ টি লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিয়ে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্রক্রিয়া মাসে ২-৩ বার এ্যাপ্লাই করলে এটি আপনার চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে তার সাথে চুল সাইনও করবে। 
  3. মেহেদী, ডিম এবং মেথি: কিছু মেহেদী পাতা নিন সাথে ১ টি ডিমের সাদা অংশ এবং ১ টেবিল চামচ মেথি। নিয়ে একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যাস রেডি আপনার হেয়ার প্যাক। ১৫ দিন পর পর এটি চুলে ব্যাবহার করতে পারেন। চুলের রুক্ষতা দূর করতে এই প্যাকটি অনেক কার্যকারি।এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
  4. শুধু মেহেদী পাতার প্যাক: পরিমাণ অনুযায়ী মেহেদী পাতা বেটে নেন। বর্তমানে অনেকে চুলে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল যুক্ত রঙ করে।তাতে তাদের চুল ভেঙে যায় ফেটে যায়, এ ক্ষেত্রে তারা মেহেদীর এ প্যাকটি ব্যাবহার করতে পারবে এতে করে তাদের চুলে ন্যাচারাল একটা রেড রেড ভাব আসবে চুলও সাইন হবে, মজবুদ হবে। এছাড়াও সাদা চুল ঢাকতে মেহেদী পাতার জুরি নেই। 
  5. মেহেদী পাতা এবং সরিষার তেল: চুলের যত্নে মেহেদী পাতা যেমন গুনী তেমনি সরিষার তেলও। একটি পাত্রে ২৫০ মিলি সরিষার তেল নিয়ে তাতে কয়েকটি মেহেদীর কাচা পাতা দিয়ে একবার তেল গরম করে রেখেদিন কিছু ঘন্টা, কিছু দিনও রাখতে পারবেন। এতে করে মেহেদী পাতার রস এবং তেল মিশে যাবে। পরিষ্কার মাথায় এ তেলটি ব্যাবহার করবেন করে ১ দিন পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলবেন। এটি আপনার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করবে। 

কে না চায় তার চুল সুন্দর থাকুক, মাথায় চুলে ভোরে যাক, কেই বা চায় না উজ্জ্বল চুল? বর্তমানের খাদ্যাভ্যাস, পানি,প্রসাধনী ইত্যাদি চুলের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে। এগুলোর কারণে চুল নষ্ট হয়ে যায়। তাই একটু হলেও আমাদের উচিত আমাদের চুলের যত্ন নেওয়া।

মেহেদী পাতার ঔষধি উপকারিতা 

শুধু চুলের যত্নেই নয় শরীরের যত্নেও মেহেদী পাতার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। 

আপনি যদি অতিরিক্ত ঘামাচির সমস্যায় ভূগে থাকেন! অথবা কোথাও ছোট  আঘাত পেয়েছেন ঘা শুকতে দেরি হচ্ছে! মেহেদী পেস্ট করে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। মেহেদী দ্রুত ঘা ভালো করে থাকে। ময়লা জীবাণুযুক্ত পানি লেগে অথবা যারা পানির কাজ বেশি করে তাদের আঙ্গুলের ভাজেভাজে পচন ধরে । এতে দুই আঙ্গুলের মাঝের অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতে মেহেদির প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে ঘা ভালো হয়ে যায়।

যে কোন ধরনের ঘুমের সমস্যা দূর করতে মেহেদী পাতা যথেষ্ট উপকারী। প্রতিদিন নিয়ম করে মেহেদি পাতার রস খেলে ঘুমের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

বর্তমানে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে! এতে করে প্রচুর গরম অনুভব হচ্ছে। এর কারণে মানুষের ঘাম হয় অনেক আর ঘামের সাথে ব্যাকটেরিয়া মিশে গেলে সেটা দূর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এ সমস্যা থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে মেহেদী পাতা। মেহেদী পাতা এবং বেনামূল সেদ্ধ পানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন। 

যাদের পায়ের পাতা ফাটা বা চামড়া ওঠা সমস্যা আছে তারা মেহেদীর পেস্ট উক্ত স্থানে লাগালে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

মেহেদী চুলে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা 

আমরা সবাই কম বেশি জানি যে মেহেদী একটি খুবই গুণাগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। এটি ব্যাবহারে আমরা অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাই। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন না করে ব্যাবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে! কিছু ছোট ছোট বিষয়েও সতর্ক থাকা ভালো। যেমন : মেহেদী পেস্ট করে নিয়ে সরাসরি না লাগিয়ে এর থেকে রস বের করে নিয়ে লাগালে সেটা চুল ও মাথার স্ক্যাল্পে ভালো কাজ করবে। মেহেদী পেস্টের যে অতিরিক্ত পাতা থাকে সেগুলোর জন্য আবার সকল স্থানে পেস্ট গুলো লাগে না। 

অতিরিক্ত টাইম ধরে মাথায় রাখবেন না। তখন মেহেদী শুখিয়ে আদ্র হয়ে গিয়ে চুল ভেঙ্গে যাবে। শুধু মেহেদী পেস্ট হলে আধা ঘন্টার বেশি রাখবেন না। কিন্তু তেল বা অন্যান্য উপাদান এর সঙ্গে সর্বচ্চো এক ঘন্টা রাখতে পারেন ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য। তবে খেয়াল রাখবেন একটি বিষয়ে। যে চুলে মেহেদী লাগালে আপনার মাথার স্ক্যাল্পে জ্বালা ভাব হচ্ছে কি না, যদি হয় সাথে সাথেই তা ধুয়ে ফেলুন। কারো কারো চর্মরোগ জনিত কারণে এমন হতে পারে। 

দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি বেশি বেশি লাগানোর প্রয়োজন নেই এতে করে হিতে বিপরীতই হতে পারে। তাই সতর্ক থাকবেন।

মেহেদী শিল্প

মেহেদী যখন শিল্প হয়ে ওঠে তখন এটি শিল্পীর অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত রেখা, আকার, চিত্র মেয়েদের হাতে হাতে ফুটে ওঠে। মেহেদী দিয়ে হাত রাঙ্গাতে এমন কোন নারী নেই যে পছন্দ করে না। আমাদের দেশের মেয়েরা ঈদে,বিবাহে, বা অন্য কোন উৎসবের আনন্দে তাদের হাতে মেহেদী লাগায়। 

এখান থেকে জন্ম হয় হাজার হাজার আর্টিস্ট দের। অনেক পড়াশোনার পাশাপাশি মেহেদী লাগিয়ে দিয়ে নিজে নিজে আর্ন করা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে অনলাইনে হেনা বিজনেস করে নিজে উদ্যোক্তা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী, যারা মেহেদি দিয়ে নিজস্ব শিল্পকর্ম তৈরির মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই যাদের আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল তাদের তো সুযোগ এই নিজেদের তুলে ধরার।

শেষ কথা  


চুল ছাড়াই মানুষ, একেবারেই শ্রীহীন 

চুল বিনে কন্যার রুপ সৌন্দয্য বিহিন। 

চুল তার সর্বাধিক সমৃদ্ধশালী অলংকার 

কেশ বিনে কন্যা তোমার কিসের অহংকার

             __মহাদেব দাশ

চুলেই যখন নারীর সৌন্দর্য তখন আমাদের তো চুলের যত্ন নেওয়ার দরকার। আর চুলের যত্নে মেহেদী পাতা খুবই উপকারী যদি সঠিক পন্থায় লাগানো যায়। মেহেদি পাতা মাথার ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে, গোড়া শক্ত করে যার জন্য চুল পড়া কমে। মেহেদী পাতা খুশকি দূর করে,মেহেদি মাথার ত্বক ও চুলের সার্বিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। তাই আজ থেকে চুলের যত্নে আপনিও রাখুন মেহেদী পাতার প্যাক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url