লাউ এর পাঁচটি মুখরোচক রেসিপি

লাউ দিয়ে আপনিও রান্না করে ফেলুন মজাদার স্বাদের তরকারি।
লাউ পছন্দ করেন না এমন মানুষ যেন খুজে পাওয়া মুসকিল। লাউ যেমন পুষ্টি গুণে ভরপুর তেমনি এর চাহিদাও অনেক এবং খেতেও সুস্বাদু। 

তাই আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি লাউ এর কিছু মজাদার রেসিপি। 

১. লাউ এর খোসা ভর্তা 

আমরা অনেকেই লাউ এর ভেতরের অংশ রান্না করে খোসা ফেলে দেই, কিন্তু আপনি কি জানেন লাউ এর সবই খাওয়া যায়? এবং সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ। লাউয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৫ এবং ভিটামিন বি৬। যা আপনার পাইলস, গ্যাস, বদহজম এর সমস্যা কমায়। যে ভাবে ভর্তা করবেন :

লাউ থেকে খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন

তারপর ১ কাপ পরিমাণ রসুন নিন। পেয়াজ ১/২ কাপ। স্বাদ বৃদ্ধি করতে ১০ গ্রাম চিংড়ি ব্যাবহার করবেন। এটা অপশনাল চিংড়ি না থাকলে চিংড়ির স্থানে বেশ কয়েকটি কালোজিরা ছিটিয়ে দিতে পারেন। তবে চিংড়ি অন্য রকম ফ্লেবার নিয়ে আসে। 

এগুলো এখন পরিমাণ মতো তেল, হলুদ, লবণ দিয়ে সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। ভাজা শেষ হয়ে গেলে পাটায় অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। ব্যাস রেডি হয়ে গেল আপনার মজাদার লাউ খোসার ভর্তা। গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন। 

২. লাউ চিংড়ি ভাজি

লাউ এবং চিংড়ি এই দুজন মনে হয় দুজনের জন্য সৃষ্টি। লাউ চিংড়ির কম্বিনেশন  অনেক পুরনো। গরম ভাতের সাথে লাউ দেশি চিংড়ির ঝোল যেন জমে ক্ষীর।আর এই রেসিপি খায়নি এমন মানুষ নেই। কিন্তু আজকে আমরা দেখাবো কিভাবে এটি আরও সুস্বাদু উপায়ে রান্না করা যায়!চলেন দেখে আসি, 

একটি  লাউ কুচি কুচি করে কেটে নিন 

তারপর প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিন 

তেল গরম হয়ে আসলে তারওপর ১৪০ গ্রাম চিংড়ি অর্থাৎ এককাপ পরিমাণ চিংড়ি ছেড়ে দিন। 

চিংড়ি একটু লাল লাল হয়ে আসলেই তার ওপর অল্প জিরা, ২ টা পেয়াজ এবং ৫ - ৬ টা কাঁচা মরিচ কুচিয়ে ছেড়ে দিন। 

একটু ভাজা হয়ে গেলে প্যানে লাউ ছেড়ে দিন। তারপর এ্যাড করুন ১/২ চা চামচ হলুদ। এবং স্বাদ মতো লবণ। তারপর ভাজা ভাজা না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। ভাজা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। এই ভাজাটা ভাত দিতে খেতে এতো মজা লাগে একবার খেলে ভুলবেন না। 

৩. লাউ এবং লাউ পাতার চড়চড়ি 

 লাউ ডুম ডুম করে কেটে নিন। তারপর পাতা পরিষ্কার করে ছোট ছোট করে নিন। যেকোনো ধরনের বড় মাছ ব্যবহার করতে হবে এই চড়চড়ি তে। 

প্রথমে মাছ কসিয়ে নিতে হবে তার জন্য কড়াইয়ে ১ টি পেয়াজ কুচিয়ে তেলের মধ্যে ছেড়ে দিন। আসতে আসতে এর মধ্যে এড করবেন সামান্য পরিমাণে হলুদ গুড়া,লবণ পরিমান মতো,  মরিচের গুড়া ১ চা চামচ, ৮ গ্রাম আদা বাটা, পেয়াজ বাটা ১০ গ্রাম,জিরা বাটা ১৫ গ্রাম এবং কয়েকটি আস্ত রসুনের কোয়া দিয়ে মসলা কষাতে হবে।

 কষানো হয়ে গেলে মাছগুলো মাংসের মতো টুকরো করে ছেড়ে দিন। তারপর মাছ কষানো হয়ে এলে তা তুলে নিয়ে তার মধ্যে লাউ ছেড়ে দিন। লাউ সেদ্ধ করার জন্য সামান্য পানি এড করুন। পানিতে বলক আসলে লাউ পাতা তার মধ্যে ছেড়ে দিন। পানির পরিমাণ বেশি কিন্তু দেওয়া যাবে না। লাউ থেকে এক্সট্রা পানি বের হয় এ কথা মাথায় রেখেই পানি  দিতে হবে। পানির পরিমাণ কমে আসার সময় তুলে রাখা মাছ গুলো কড়ায়ে দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। ঝোল মরা মরা অবস্থায় আসলে নামিয়ে ফেলুন ব্যাস রেডি আপনার লাউ এবং লাউপাতার রেসিপি। এবং গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

 ৪. লাউ ঘাটি 

বিয়ের বাড়িতে সকাল বেলা হোক অথবা বেশি সদ্য বিশিষ্ট পরিবারে লাউ ঘাটির যেন জুরি নেই। বেশ মজাদার এবং কার্যকারী এর রেসিপি টা কিভাবে তৈরি করবেন চলেন দেখে আসি। 

প্রথমে লাউকে একটু লবণ  দিয়ে ভাপিয়ে নিতে হবে ১০ মিনিট এর জন্য।

অন্যদিকে কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে তেল টা গরম হলে মাছের মাছের মাথা ভালো করে ভেজে তুলে নিতে হবে।

এবার সেই তেলেই গোটা জিরে আর তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে তার মধ্যে পেয়াজ টা দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে।

পেয়াজ লাল করে ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা, রসুন বাটা ও কাঁচা মরিচ কুচি এড করতে হবে। ভালো করে কষতে হবে এবার।

ভালো ভাবে কষানো হয়ে এলে সমস্ত গুঁড়ো মাসলা যোগ করতে হবে। তারপর ১ চা চামচ জল যোগ করতে হবে। এবার মাসলা থেকে তেল ছেড়ে এলে লবণ ও চিনি যোগ করতে হবে।

তারপর ভাপিয়ে রাখা লাউ টা দিয়ে দিতে হবে। ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করে জল টা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে মাঝারি আঁচে লাউ টা পুরোপুরি সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত।লাউ পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে এলে ভেজে রাখা মাছের মাথা একটু হালকা ভাবে ভেঙে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।

এবার চাপা দিয়ে ২-৩ মিনিট এর জন্য জোর আঁচে রান্না করতে হবে। তারপর ঢাকনা খুললেই পরিবেশনের জন্য তৈরী মাছের মাথা দিয়ে লাউ এর ঘাটি। গরম ভাতের সাথে দারুন লাগে এটা খেতে। রুটি দিয়েও খাওয়া যায়। 

৫. লাউ মাংস 

প্রথমে লাউ বড় কিউব করে কেটে নিন। ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে পেয়াজ কুচি, দুটো তেজপাতা দিয়ে দেবেন। এবার একে একে আদা বাটা, রসুন বাটা, গরম মসলা গুড়ো, মরিচ গুড়ো, হলুদ গুড়ো, ধনে গুড়ো, জিরে গুড়ো আর লবণ দিয়ে কষাতে থাকুন। 

কষা মশলা থেকে তেল বেরিয়ে আসলে আগে থেকে ধুয়ে রাখা মাংস দিয়ে দিন। একটু একটু করে ঢাকনা দিয়ে কষাতে থাকুন। প্রয়োজনে একটু পানিও দিতে পারেন। 

ঝোল কমতে শুরু করলে লাউয়ের টুকরোগুলো আর কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। আরও ১০ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রাখুন। এতে লাউ সিদ্ধ হবে আবার জলও ছাড়বে। তরকারি ভালো মতো সেদ্ধ হলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে দিন।

 ১৫ মিনিটের মতো ফোটান। নামানোর ঠিক আগে বা আঁচ বন্ধ করে ফুটন্ত তরকারির ওপর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিন। গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।


আমাদের মন্তব্য 

লাউ এর কথা আসলেই মনে পরে গানটির কথা, সাধের লাউ বানাইলো মরে বৈরাগী

লাউয়ের এত মধু

জানে গো যাদু,,, সাধের লাউ।

লাউ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এই সবজির গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। লাউ এর মধ্যে পানির পরিমাণ বেশি এবং ক্যালরি কম। তাই গরমের দিয়ে বেশি বেশি লাউ তরকারি খেলে আমাদের শরীর হাইড্রেট থাকে। লাউয়ে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও উচ্চমাত্রার পানি আমাদের ত্বক ও চুল সুস্থ রাখে। সবজিটি অনেক ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসের সমস্যা,পেট ফাঁপা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া যারা ডায়েট করতে চান তাদের জন্য লাউ উপযুক্ত সবজি। তাই শরীর সুস্থ রাখতে লাউ খান বেশি বেশি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url