রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

কিছু সংখ্যাক মানুষ রয়েছে যারা কথায় কথায় রেগে যায়। তাদের মেজাজ সবসময়ই গরম হয়ে থাকে। এগুলো কেসে দেখা যায় যে ব্যাক্তির স্বাভাবিক কথাতেও অপর ব্যাক্তি ক্ষেপে যায়। যদিও সে চায় যে রাগ করবো না তারপরও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আপনি যদি এ সমস্যায় ভূগে থাকেন তাহলে আজকের এ আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। 

রাগ কি? 

রাগ বা ক্রোধ হলো একটি তীব্র মানসিক অবস্থা যেটা ব্যাক্তির অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তির জন্য একটি শক্তিশালী অস্বস্তিকর,অসহযোগী প্রতিক্রিয়া। যেমন ধরেন আপনি কোন হোটেলে খেতে গিয়েছেন। খাবার অর্ডার করলেন, সে খাবার ওয়েটারের সার্ভ করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। তখন আপনি তার ওপর চেচামেচি শুরু করে দিলেন। তখন সেই মূহুর্তে আপনি যেগুলো আচরণ দেখাবেন সেটাই আসলে রাগ। 

মানুষের রাগের উৎপত্তি 

রাগ মানুষের শরীরে একধরনের এডরিনালাইন হরমোন নিঃসরন করে যার জন্য পেশী গুলোতে উত্তেজনা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং ব্লাড প্রেসার বেশি হয়ে যায়। 
মানুষ যখন নৈরাশ্য, অসন্তুষ্টি, অপছন্দ অনুভব করে অথবা কোন ভয় বা ভীতিকর অবস্থায় পড়ে তখন রাগের সৃষ্টি হয় অথবা জেনেটিক কারণে কারো কারো আবার নেশাদ্রব্য সেবনের কারণে। কিভাবে হয়? যখন কোন ব্যাক্তি বন্ধু শূন্য,বাহিরে বের হয় না, তেমন কারোর সাথে মেশে না, তখন তার মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয় যার কারণে পরিবারের কেও তার সাথে কথা বলতে গেলেই সে রেগে যায়। আবার কারো কোনো ব্যাক্তিগত অপছন্দের কারণও তার রাগ হওয়ার কারণ। যেমন কোন একজন স্পেসিফিক গায়কের গান আপনার খুবই বিরক্ত লাগে, তার গান হঠাৎ করে সামনে আসলেই মনে মনে খুবই রাগ অনুভব হয়, অপছন্দের মানুষের সাথেও কমিউনিকেশন করতে গেলে ব্যাক্তির রাগ হয়ে যায়। এরকম ছোট বড় অনেক বিষয় আছে রাগ সূত্রপাত হওয়ার জন্য।
 রাগ আবার দুই ধরনের। 

১. স্বাভাবিক রাগ: কিছু কারণ থাকবে যেটার ওপর আপনার রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। যেমন: আপনার যে কাজ পছন্দ না আপনি আপনার বন্ধুদের সেকাজ আপনার ওপর করতে বারণ করেছেন তারপরও তারা সেকাজ বার বার করছে। আবার আপনাকে আপনার খুব কাছের মানুষ মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত আপনি পরে একদিন এ সম্পর্কে জানতে পারলেন। অবশ্যই আপনার রাগ হবে আর রাগ হয়ে আপনি তাকে সাইলেন্ট শাস্তি দিলেন অর্থাৎ ম্যাচিউর শাস্তি।আপনি এড়িয়ে চলছেন এমন ধরনের মানুষ কে। মানে রাগ আপনার কন্ট্রোলে রয়েছে। এমন ধরনের কেস কে বলা হচ্ছে স্বাভাবিক রাগ। 
 
2. অস্বাভাবিক রাগ: মাত্রাতিরিক্ত রাগ অস্বাভাবিক রাগের লক্ষণ। অতিরিক্ত রাগের  ফলে পারিবারিক শান্তি নষ্ট হয়।পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বাজে প্রভাব পারে। অস্বাভাবিক রাগ মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। অস্বাভাবিক রাগের উদাহরণ হলো : মদ্যপান এর জন্য অর্থ না দেওয়ায় পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করলেন, সংঘাত পূর্ণ অবস্থা তৈরি করলেন। মারামারি, খুন খারাবি। অথবা অন্য কারোর ওপর রাগ করে নিজেকে আঘাত করা,এমন ধরনের রাগ হলো অস্বাভাবিক রাগ। কারোর মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে একজন ভালো সাইকোলজিস্ট এর কাছে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।


রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ৭ টি উপায় 

এখানে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সাতটি নিয়ম রয়েছে যা আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। রাগ এমন একটা প্রতিক্রিয়া যা প্রতিটি মানুষেরই হয়। কিন্তু রাগের পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায় তখন অবশ্যই এটা সবার জন্য ক্ষতিকর। কথায় আছে না? অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। রাগ তো নয়ই। এখানে কিছু উপায় রয়েছে যেটা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে : 

১. স্থান পরিবর্তন করুন : আপনি যেখানে রেগে যাবেন সেখান থেকে দ্রুত চলে আসবেন। যখন দেখবেন যে, নাহ এই কাজে আপনার রাগ হতে পারে বা আপনি সেখানে থাকলে আরও বেশি রাগারাগি হবে তাই মনে মনে ভাববেন যে 'নাহ কিছুতেই রাগ করা যাবে না' রাগ স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম। আমি ঠান্ডা মাথায় সব সলভ করবো। এই কথা গুলো চিন্তা করে চলে আসবেন সেখান থেকে। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বুদ্ধিমান রা রাগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে না। 

2. ব্যায়াম করুন : তাৎক্ষণিক রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিঃশ্বাসের ব্যায়াম বেশ আদি ও কার্যকরী পদ্ধতি। রাগ থেকে কনসার্ন সরিয়ে নিশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিবেন। বুক ভরে গভীর নিশ্বাস নিন এবং কিছু সময় তা ধরে রাখুন, কিছুক্ষণ পর বাতাস ছেড়ে দিন। এটি রাগ কমাতে সহায্য করে।

3. নেশা জাতীয় জিনিস বাধ দিন : অনেক মানুষ আছে যারা ক্রোধ কমানোর জন্য নেশা দ্রব্য সেবন করে। যেটা মানুষের মেজাজ কে আরও খিটখিটে করে তোলে। তাই রাগ কমাতে হলে এসব বদ অভ্যাস পরিহার করুন। 
4.ব্যায়াম এবং মেডিটেশন: সকালে এবং ঘুমনোর আগে নিয়মিত মেডিটেশন করবেন। এতে শরীরের অন্য উপকারের সঙ্গে সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রণও হয়।
5. বই পড়ুন : রাগ কমাতে বই এর জুরি নেই। যারা বই পড়ে তারা অনেক চুপচাপ স্বভাবের হয়। কারণ বই আমাদের শিক্ষা দেয় নমনীয় হতে। নিয়মিত বই পড়ুন, নিউজ পেপার পড়ুন দেখবেন আপনার জ্ঞানের প্রসারতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আপনার রাগও কমে যাচ্ছে আপনি রাগ করার সময়ই পাচ্ছেন না। 
6. পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন: কখনোই মনে করবেন না যে আপনি রাগারাগি বা তর্ক না করলে আমাকে অপর ব্যাক্তি দূর্বল মনে করবে। মারামারি, রাগারাগি ব্যাক করা মানেই জিতে যাওয়া নয়। আপনি এখানে ইগনোর করে জিতে যাবেন। কারণ নমনীয় জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মানুষ পছন্দ করে, আর তাদের লক্ষ্মণ ও এটাই। 
7. ধর্ম ভীরুতা : যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নিজের মধ্যে ধর্ম ভীরুতা নিয়ে আসবেন। রাগ আসলেই চিন্তা করবেন রাগ তো খারাপ বিষয়। আর যে ব্যাক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সৃষ্টিকর্তা তাকে পছন্দ করেন। এই ভেবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন।

যেসব খাদ্যগুলো রাগ কমায় 

রাগ কমানোর যেমন মনস্তাত্ত্বিক উপায় রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু খ্যাদ্যাভাস যা আপনার রাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে  যেমন :
ডিম: ডিম মেজাজকে প্রভাবিত করে থাকে। এতে প্রোটিন, ভিটামিন বি আর ডি আছে যা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় ডিম রাখার চেষ্টা করুন।
আলু : কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ একটি খাবার আলু। এটি রক্তচাপ কমায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কলা : ক্ষুধা মানুষের রাগ বেশি করে। কলাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ রয়েছে যেজন্য কলা খেলে পেট ভরা ভরা লাগে। কলা খেলে মানুষের মস্তিষ্ক শান্ত থাকে। তাই কলা রাগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
চকলেট: সবার কাছে কমবেশি লোভনীয় খাবার হচ্ছে চকলেট। ডার্ক চকলেট খাবেন। এই খাবারটি রাগ কমাতে সাহায্য করে। এই লোভনীয় খাবারটি খেলে সেটি ফিল গুড হরমোন ক্ষরণকে বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি স্ট্রেস কমানোর হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। 
আপেল : যখন রেগে যাবেন তখন আপেল খাবেন। আপেল যখন চিবুবেন তখন রাগ কমে যাবে। আপনার মস্তিষ্ক তখন রাগের কথা চিন্তা করার সুযোগ পাবে না। তাছাড়া আপেলে রয়েছে কার্বহাইড্রেড যা রাগ কমায়। 
রাগের মাথায় মানুষ অনেক ঘটনাই ঘটিয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে তো সে নিজের ক্ষতিও করে ফেলে। তাই আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক অভ্যাস এর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও পরিবর্তন করুন।

রাগ যেভাবে আপনার জীবনে প্রভাব ফেলে 

রাগের প্রভাব অতিমাত্রায় প্রসারিত। রাগের কারণে আপনার শারীরিক, মানষিক, সামাজিক, রাজনৈতিক দিকে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে!
যে ব্যাক্তির বেশি রাগ। অপ্রাসঙ্গিক কারণে রেগে যায়, কথায় কথায় রেগে যায় এমন মানুষ বন্ধু হারায়। অতিরিক্ত রাগের কারণে তার কোন বন্ধু থাকে না। ফলে সে একা হয়ে যায় বন্ধু শূন্যতায় ভূগে। 
আচমকা রাগের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে, ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন স্ট্রোকও হতে পারে। তাই সাবধান হন। 
পারিবারিক সমস্যা হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য রা এর দ্বারা বাজেভাবে প্রভাবিত হবে। পরিবারের কেও আপনার সাথে জরুরি তথ্য শেয়ার করতে ভয় পাবে। ফলে সম্পর্ক ঠিক থাকবে না 
গবেষণায় জানা গিয়েছে অতিরিক্ত রাগী ব্যাক্তির শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। 

রাগের কারণে আপনার সমাজের মানুষও আপনাকে পছন্দ করবে না। আপনাকে নিয়ে কূটউক্তি করবে। সমাজের মানুষের সাথে ঝামেলা হবে। ফলে কেও আপনাকে পছন্দ করবে না। তারা চাইবে এতো রাগী মানুষ তাদের সমাজে না থাকুক 

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাগী ব্যাক্তি রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সাথে জরিত থাকলে রাজনৈতিক অসংহতি দেখা দেয়। দেখা যাচ্ছে দলের এক ব্যাক্তির সাথে অন্য ব্যাক্তির মতের অমিল হচ্ছে, এখান থেকে শুরু হবে মারামারি, কাটাকাটি। অনেক ক্ষেত্রে ভূল সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে ক্ষোভের বশে। যার প্রভাব পরে জনজীবনেও।


আমাদের মন্তব্য 

রাগ হলো এমন একটি বস্তু যা আপনাকে ধ্বংস করে দিবে। আপনাকে পুশুতে রুপান্তরিত করে ফেলবে যদি না আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। একটি কথা মনে রাখবেন সমসময় যে, রাগ করা প্রতিটি মানুষেরই লক্ষণ কিন্তু রাগের মধ্যেও নিজের মন শান্ত রাখা জ্ঞানী ব্যাক্তির লক্ষণ। অনেক বড় মনমানসিকতার অধিকারী হন এনারা। এবং সমাজে সম্মানীয় ব্যাক্তি এনারাই। একটি কোটেশন রয়েছে "সেই ব্যাক্তিই প্রকৃত শক্তিশালী বীর, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম"। তাই রাগ করা থেকে বের হয়ে আসুন। নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তুলুন। দেখবেন সবকিছু ঠিকঠাক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url