সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া

সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলতে কি বুঝ? 

অনেক গুলো বিকল্প থেকে একটি বিকল্পকে বেছে নেওয়াই হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অর্থাৎ আপনি বাসা থেকে অফিসে যাবেন, আপনার চিন্তা হবে যে আপনার সাধ্যের মধ্যে ঠিক কোন মাধ্যমে গেলে আমি ঠিক সময়ে পৌছতে পারবো। এখন আপনার সামনে অনেকগুলো বিকল্প আসবে, যেমন : বাস, মোটরসাইকেল, রিক্সা অন্যান্য যানবাহন। আপনি তখন চিন্তা করছেন বাসে গেলে মানি সেভ ও হবে টাইম মতো পৌছবো আবার চিন্তা হবে বাসে গেলে তো বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আবার ঠেলেঠুলেও যেতে হবে। রিক্সায় গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আর উবার ভারা নিলে তাড়াতাড়ি পৌছাবো কিন্তু টাকা অনেক খরচ হবে। এগুলো বিকল্প আপনি চিন্তা করে শেষ পর্যায়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনিত হবেন। সেটাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে পদ্ধতি এটাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বলে।


 সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া 

সঠিক সময়ে ঠিকসিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর ব্যক্তিগত এবং  প্রতিষ্ঠানিক সাফল্য নির্ভরশীল । সেইজন্য  যেনোতেনোভাবে সিদ্ধান্ত নিলে তার ফল উল্টো হতে পারে । এ কারণেই সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে অবশ্যই খুব সচেতনতার সাথে সুবিধা অসুবিধাসহ নানান দিক বিচার-বিবেচনা করতে হয়। যেমন : একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক বেতন পাওয়ার সাথেই টাকা ভাগ করে রেখে দিতে হয়, তার অতিরিক্ত শখ আহ্লাদ তো দূরের বিষয় তাকে সপ্তাহে একবার  মাংস কেনার সময় চিন্তা করতে কিনতে হয় যে এ সপ্তাহে মাংস ভাত খেলে পরে সে কিভাবে চলবে, এক্ষেত্রে সে মাংস নিবে কিনা এই সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেক হিসেব বিকল্প হিসেবে নিয়ে আসতে হয়, যেমন বাকি দিন কি দিয়ে বাজার করবে? বা মাংস না নিলে সেই টাকা দিয়ে আরও সাতদিনের বাজার হয়ে যাবে, একদিন ভালো খেয়ে সাতদিন খারাপ খাবো, এ টাকা দিয়ে ওষুধ কিনলেও তো হতো! এগুলো যাবতীয়  বিকল্প চিন্তা করেই সে ব্যাক্তি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। 

এমন ক্ষেত্রে আবার সিদ্ধান্ত নেয়াটা কিছুটা সহজ। কিন্তু এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র চলে আসে জীবনে, যে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে অবশ্যই অনেক বিষয় ভাবতে হয় এবং যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে কতকগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপ বিবেচনার বা প্রক্রিয়ার অনুসরণের প্রয়োজন পড়ে। এই প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ গুলো হলো :

সমস্যা চিহ্নিতকরণ : কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা যদি ঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না যায় তবে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না। যদি সকল সমস্যা নিয়ে একই সাথে চিন্তা করা হয় তাহলে গোলমাল তখনই বেধে যায়। তাই একে একে সমস্যা চিহ্নিত করুন তারপরই অন্য পদক্ষেপ নিতে পারবেন। 

বিকল্পের মূল্যায়ন : সমস্যা সিলেক্ট করার পরে আপনার সামনে কতকগুলো বিকল্প সমাধান আসবে। আপনি  প্রতিটা বিকল্প'র উপায় সুবিধা অসুবিধার আলোকে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করবেন। অনেক গুলো বিকল্প আপনার সামনে আসলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে কোনটা করা উচিৎ হবে। তাই বিকল্পের মূল্যায়ন করা খুবই জরুরি বিষয়। 

পড়া : যে যত বেশি পড়াশোনা করে সে তত বেশি জানে। সংবাদ দেখা, পত্রিকা পড়া, বই পড়া এগুলো মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং মানুষকে  অনেক অজানা তথ্যর সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়, ফলে যে জানে। আর যে ব্যাক্তি অনেক জানে তার পক্ষে সঠিকটা মূল্যায়ন করা কঠিন কাজ না।  কারণ সে জানে কোনটা করলে ভালো হবে। 

সিনেমা দেখা : অনেক চলচ্চিত্র রয়েছে যেখানে দেখবেন অভিনেতারা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় এবং কি ভাবে তারা সমস্যা থেকে বের হয়ে আসে। এগুলো চলচ্চিত্র, নাটক দেখলে আপনার কৌশল জানার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। 

পদক্ষেপ নেওয়া : এ পর্যায়ে আপনার বাছাইকৃত বিকল্প থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিবেন। যেমন আপনার পড়া বই বা দেখা কোন নিউজ বা কোন চলচ্চিত্রর সাহায্যে নিয়ে পদক্ষেপ নিবেন।

পর্যবেক্ষণ : শেষে প্রক্রিয়া থেকে  যে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা এবং কোন প্রকার ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে তার সংশোধন করা উচিৎ। 

এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আপনার জন্য ভালো হতে পারে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব 

সিদ্ধান্ত গ্রহণ মানুষের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন কিছুর সফলতা নির্ভর করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপরে। তার এটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো :

১.সম্পদের সুষ্ঠু ব্যাবহার : সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে দিয়েও সম্পদের সঠিক ব্যাবহার করা যায়, যেমন যোগ্য কাজে যোগ্য ব্যাক্তিকে নিয়োগ দেওয়া। আমার একটি কারখানা রয়েছে এখন আমি সেখানে গণহারে লোক নিয়োগ দিচ্ছি বিবেচনা না করে তাহলে কি হবে? যে কাপড় তৈরি করায় দক্ষ না তাকে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তুললে নাকি দক্ষ শ্রমিক নিলে আমার বেশি সুবিধা? তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক উপকরণ দক্ষ লোকের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং ফলপ্রসূ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। 

২.গতিশীলতা সৃষ্টি: সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি নৈমিত্তিক কাজ এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়িত হয়। নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সমস্যার উদ্ভবের সাথে সাথে ব্যবস্থাপক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে উদ্যম ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৩.উদ্দেশ্য অর্জন : আপনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি শুরু করেছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এর ফলে আপনার সেই উদ্দেশ্য অর্জন হবে। কারণ অনেক গুলো বিকল্প থেকেই সঠিকটা বেছে নেওয়া হয়। 

৪.প্রশিক্ষণ : সিদ্ধান্ত যখন গ্রহণ করা হয় তখন দলের সদস্যরা তাদের মতামত বিনয়ের সুযোগ পায়। এ জন্য দলীয় সদস্যরা প্রশিক্ষণ লাভ করে সমস্যার সমাধানের কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। 

৫.বাছাইকরণ : সঠিক  সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে, নেতারা তাদের দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে যে তারা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশে সফল হওয়ার জন্য ভাল অবস্থানে আছে। অন্যদিকে, ভুল পছন্দ দলগুলোকেও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করে। এজন্য অনেক গুলো ভূলের মধ্যে দিয়ে সঠিকটা বেছে নিতে হবে । এজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ট্রুটি সমূহ 

  • একজন মানুষের জীবনে শুধুমাত্র একটি সমস্যা থাকে না। মানুষ নানান ধরনের সমস্যায় জরজরিত। এ অবস্থায় সে সমস্যা চিহ্নিত করতে হিমসিম খেয়ে যায়। তাকে সর্ব প্রথম কোন সমস্যা সমাধান করতে হবে তা ঠিক করা কঠিন হয়ে যায় কারণ সব সমস্যা কেই বড় সমস্যা মনে হয়। 
  • একটা সঠিক সিদ্ধান্তে যাওয়ার জন্য বিকল্পগুলো যাচাইবাছাই করতে হয়। আর এই যাচাই কি পর্যাপ্ত তথ্য না জানলে করা সম্ভব?  অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ তথ্যের অভাবে সঠিক যাচাই এ ব্যার্থ হয়। 
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীগণ অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তাদের মধ্যে পক্ষপাতমূলক ঝোক তৈরি হলে স্বাভাবিকভাবেই সঠিক  সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে সমস্যা হয়।
  • অনেক সময় পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ইত্যাদির অভাবেই সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হয় না। অধস্তনদের সহযোগিতার অভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। 
  • অনেক সময় দেখাযায় যে ব্যাক্তি অর্থের অভাবেও সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। সিদ্ধান্ত যে বাস্তবে রুপ দিবে সেটা ব্যাক্তি অর্থের অভাবে পেরে উঠে না। তাই আর্থিক সমস্যাও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় একটি ট্রুটি হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ কথা 

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ট্রুটি থাকলেও  তাইবলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো না তা নয়। প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া একটি এক্সাট পছন্দ তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে। কিছু ব্যাতিক্রম থাকতেই পারে। তবে ব্যাতিক্রম কে মডেল হিসেবে নেওয়া যাবে না। নিজেদের ভালোর জন্য অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url