জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল

জলবায়ু পরিবর্তন ধ্বংসের কারণ  

জলবায়ু পরিবর্তন শব্দটি খুবই মারাত্মক! শব্দটি নির্দেশ দেয় ধ্বংসের। মূলত লম্বা সময় ধরে আবহাওয়া বা পরিবেশের যে পরিবর্তন ঘটে সেটাই জলবায়ু পরিবর্তন। কেমন ধরনের পরিবর্তন? যেমন বর্তমান আবহাওয়ার দিকে তাকালে আমরা তার ভয়াবহ রুপ দেখতে পাই। শীতের সময় শীত অনুভব হচ্ছে না শীতকাল চলে গেলে শীত পরে। এবং গরম যেন দূরই হয় না। অতিরিক্ত গরম এর জন্য মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বন্যায় মানুষ বাসস্থান হারাচ্ছে। অর্থাৎ সে সময়ে যেমন আবহাওয়া হওয়ার কথা ছিল তা সঠিক সময়ে হচ্ছে না। 

এখন প্রশ্ন হলো কেন এমন হচ্ছে? এর পেছনে আসলে প্রকৃতির থেকে মানুষই বেশি দায়ী। আমরা যত উন্নত হচ্ছি যত প্রযুক্তি ব্যাবহার করছি তত খানি পরিবেশের ক্ষতি করছি।

জলবায়ু পরিবর্তন এর কারণ 

জলবায়ু প্রধানত দুই কারণে  পরিবর্তন হচ্ছে 
১. প্রাকৃতিক কারণ 
2. মানব সৃষ্ট কারণ 

পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা,অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান ইত্যাদি এগুলো হলো প্রাকৃতিক কারণ। এটা রোধ করা সম্ভব নয়। 

তবে মানবসৃষ্ট কারণ সমূহ যেমন: কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস, কয়লা পোড়ানো, ইটভাটার ধোঁয়া, গাছ কাটা ইত্যাদি আমাদের হাতে। এগুলো তো আমরা রোধ করতে পারি। প্রকৃতিগত কারণ থেকে মানুষের কর্মকান্ডই বেশি দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে।

মানব সৃষ্ট কারণগুলো যেভাবে ক্ষতি করছে

  • গাছ কাটা : বর্তমানে দেশে এতো তাপপ্রবাহ চলছে যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কেও কেও করছে হিট স্ট্রোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছিল বন্ধ। এতো তাপমাত্রা কেন এটা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখলো যে দেশে প্রচুর পরিমাণে গাছ কাটা হয়েছে। প্রাচীন যে বড় বড় গাছ ছিল তা এখন খুবই কম। আগের মতো আর বড় গাছের এখন আর দেখাই মেলে না। গাছ লাগানো নিয়ে সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ প্রচুর কন্ট্রোভারসি হয়ে ছিল। মানুষ পরে ছিল গাছ লাগানোর ট্রেন্ডে, কিন্তু একদল লাগাচ্ছে তো অন্যদল রাস্তা ঘাট মেরামত, বিল্ডিং নির্মান এর কাজের জন্য গাছপালা কেটে ফেলছে। তাও ব্যক্তিপর্যায়ে নয়, বন বিভাগও মেতেছে গাছ নিধনের এ ধ্বংসযজ্ঞে। গাছগাছালির অভাবে  বৃষ্টিহীন খরতাপে পুড়ছে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল।
  • ইটভাটার ধোঁয়া : ইটভাটার ধোঁয়া কতটা ক্ষতি কর পরিবেশ এবং মানুষের জন্য এ সম্পর্কে ব্যাবসায়ী নিজেরাও সচেতন না। ইট ভাটা থেকে বের হওয়া দূষিত বায়ু মানব দেশে প্রবেশ করলে তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। মানুষ খুব দ্রুতই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইট ভাটার আশেপাশের জমিতেও ফসল উৎপাদন করা যায় না, ফসল বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তারপরও ইট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। দেশে ৭ হাজারের বেশি ইটভাটা। বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন
  • ইট বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যখন ইট ছিল না তখন কি মানুষের বাসস্থান ছিল না? অথবা আমরা কি পারি না পরিবেশ বান্ধব বাসস্থান নির্মানের ম্যাটারিয়ালস তৈরি করতে। এমন আধুনিকায়ন এর কি দরকার আছে যেখানে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই? মানুষ কিন্তু জানে তবুও সচেতনতা অবলম্বন করে না 
  • বজ্য, কালো ধোঁয়া : শিল্পকারখানার অসচেতনতা পরিবেশ বিপর্যয় এ বিরাট ভূমিকা রাখছে। গাড়িঘোড়ার ধোঁয়া সরাসরি বায়ুতে মিশে বায়ু দূষণ করছে। কারখানার বজ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে ফলে পানি দূষিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে মৎস সম্পদ। তারা কি পারতো না উন্নত দেশের মতো বজ্য সরাসরি পানিতে না ফেলে রিসাইক্লিন করে তারপর পানিতে ফেলা। এবং জাপানের মতো কালো ধোয়া তৈরি কারী মটর না ব্যাবহার করা। 
  • মাটি দূষণ : শিল্পায়ন এর জন্য পলিথিন এর ব্যাপক ব্যাবহার হচ্ছে। এবং পলিথিন অপচন শীল। মাটিতে মিশে এটি মাটির গুনাগুণ নষ্ট করে ফেলে। তারপরও পলিথিনের ব্যাবহার বেশি। আমরা পরিবেশ ঠিক রাখতে পলিথিনের ব্যাবহার বাদ দিলেও দিতে পারতাম, পলিথিনের বিকল্প তো রয়েছেই কিন্তু কদর হয় না। মানুষই সচেতন না।
  • গ্রীন হাউজ গ্যাসের প্রভাব : গ্রিন হাউস গ্যাস বিক্রিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা প্রদান করে। ফলে গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুমন্ডলের তাপ ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তখন  শুরু হয় বিশ্ব উষ্ণায়ন।                                                                                         

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

  1. বৃষ্টপাত কমে যাওয়া: জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায়,ভূমির পরিবর্তন ও বিবর্তনে আবহাওয়া বা জলবায়ুর উপাদান হিসেবে বৃষ্টির গুরুত্ব অপরিহার্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য সেই বৃষ্টিপাতই কমে গিয়েছে। আর বৃষ্টিপাত কম হলে নদী তে পানি শুকিয়ে যায়, জমিতে ভালো ফসল ফলে না যার জন্য মানুষের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত যোগান হয় না। 
  2. সমুদ্রপৃষ্ঠ'র উচ্চতা বৃদ্ধি : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রের পানির আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরফ গলন হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ। সমদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ম্যানগ্রোভ ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে। সেচের পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়, এতে করে ফসলের ফলন কমে যায়। লোকালয় ক্ষতি হয়, অনেক মানুষ তাদের বাসস্থান হারায়। আর জলবায়ু পরিবর্তন এর কারণে দিনে দিনে সমুদ্রপৃষ্ঠ'র উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। 
  3. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি: রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার বলে একটি কথা আছে না? অর্থাৎ তুমি যা প্রকৃতি কে দিবে প্রকৃতি তাই তোমাকে ফিরিয়ে দিবে। আমরা শিল্পায়নের ফলে আমাদের ন্যাচার ধ্বংস করছি তাই ন্যাচারও সুযোগে আমাদের ধ্বংস করছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় বন্যা এত্তো পরিমাণে ক্ষতিকরছে যা মানুষের পরিকল্পনার বাইরে ছিল। আগে বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বছর পড় পড় হলেও এখন তা বর্তমানে একবছর পড় পড়ই হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস নদীভাঙ্গন এর ফলে হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 
  4. ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস:বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পেয়ে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী মরুকরণ। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। ভবিষ্যতে পানি পাওয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে উঠবে। 
  5. প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস:জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানারকম প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাংলাদেশে। অনেক প্রজাতিই হারিয়ে যেতে বসেছে। গাছ, মাছ, পাখি, ফুল, ফল সবকিছুতেই এই প্রভাব পড়ছে।

আমাদের মন্তব্য

কাজী নজরুল ইসলাম এর "আমি হব সকাল বেলার পাখি" কবিতার একটি লাইন আমাদের খুব করে উৎসাহ দেয়। লাইনটি হলো (আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?) 
তো আসলেও তো নাই পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব সেখানে আমরা নিয়েরাই যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে কিভাবে হবে?  আসুন সবাই জেগে উঠি।আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে আমরা সবাই সম্মিলিত হয়ে চেষ্টা করি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url